তবে কি ‘ঘনিষ্ঠ মিত্র’ কাতারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল যুক্তরাষ্ট্র?

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি থাকা সত্ত্বেও কাতারে সংঘটিত এ হামলার ঘটনায় আলোচনার ঝড় উঠেছে। তবে কি সত্যিই দীর্ঘদিনের কৌশলগত মিত্র কাতারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র? নাকি এটি কেবল কূটনৈতিক ভারসাম্যের অংশ?
কাতারে ইসরায়েলি হামলা ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
সাম্প্রতিক সময়ে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়। অথচ এখানেই রয়েছে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আল উদেইদ, যেটি পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এত বড় ঘাঁটি থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে থামায়নি, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, এ বিষয়ে তাকে অবগত করা হয়নি। কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ওয়াশিংটনকে জানিয়েই এ অভিযান চালিয়েছে তেলআবিব।
কাতার-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক
মধ্যপ্রাচ্যে কাতার যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। আল উদেইদ ঘাঁটি দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির কেন্দ্রবিন্দু। ইরানের হামলা প্রতিহত করতে একাধিকবার এই ঘাঁটি ব্যবহার করেছে মার্কিন বাহিনী। ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় কাতারকে সবসময় ভরসার জায়গা হিসেবে দেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় কাতারের কৌশলগত নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। মিত্র হয়েও কাতারের মাটিতে ঘটে যাওয়া হামলা প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্র নীরব ছিল, যা সম্পর্কের ভেতরে ফাটল তৈরি করছে।
কাতারের প্রতিক্রিয়া
আশ্চর্যের বিষয়, হামলার পর কাতার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো কঠোর অবস্থান নেয়নি। বরং নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি করার চেষ্টা করছে দোহা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের কর্মকর্তারা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদারের আলোচনা করেছেন।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি জানিয়েছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে। ইসরায়েলের এই হামলা কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রয়োজনীয়তাকে সামনে এনেছে।”
আরব বিশ্বের উদ্বেগ
ঘটনার পর শুধু কাতার নয়, অন্যান্য আরব দেশও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভরসা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা হিসেবে দেখলেও সাম্প্রতিক অবস্থান অনেককে দ্বিধায় ফেলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ করেছে। অনেক আরব বিশ্লেষক মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অস্পষ্ট ভূমিকা আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিসংখ্যান ও বাস্তবতা
কাতারে অবস্থিত আল উদেইদ ঘাঁটিতে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও যুদ্ধবিমান। এমন শক্তিশালী ঘাঁটি থাকার পরও ইসরায়েল কোনো বাধা ছাড়াই হামলা চালাতে সক্ষম হওয়ায় প্রশ্ন তুলছে আঞ্চলিক বিশ্লেষকরা।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক মোনা ইয়াকুবিয়ান বলেন,
“এই হামলা কেবল কাতারের জন্য নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়েও কাতারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা ওয়াশিংটনের অবস্থান দুর্বল করেছে।”
অন্যদিকে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, কাতারের নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তির উদ্যোগ থেকে বোঝা যায়, তারা এখনও যুক্তরাষ্ট্রকেই দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার মূল অংশীদার হিসেবে ধরে রাখতে চায়।
কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে দ্বিধা তৈরি হয়েছে। মিত্র হয়েও নিরাপত্তা দিতে না পারা প্রশ্ন তুলছে ওয়াশিংটনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। তবে কাতারের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করার তৎপরতা ইঙ্গিত দিচ্ছে—সম্পর্ক ভাঙনের চেয়ে নতুন কৌশলগত জোটই ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রশ্ন রয়ে যায়, আরব বিশ্ব কি এখনও নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেই ভরসার জায়গা মনে করবে, নাকি নতুন কোনো আঞ্চলিক সমীকরণ গড়ে উঠবে?
এম আর এম – ১৩৮২,Signalbd.com