শেরপুরে পিডিবির অর্ধকোটি টাকার ক্যাবল চুরির অভিযোগ, ২টি গাড়িসহ আটক ৯

রোববার ভোররাতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী শহরের কালিনগর বাইপাস এলাকায় একটি ভাড়া নেওয়া ডিপোতে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযান থেকে দুই ড্রাম বৈদ্যুতিক ক্যাবল, একটি ট্রাক এবং একটি পিকআপ জব্দ করা হয়। অভিযানে ৯ জনকে আটক করা হয়েছে, যারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলে জানা গেছে।
অভিযানের বিস্তারিত
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পিডিবির আওতাধীন বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক লাইনের কাজ পরিচালনা করছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমআরএম ইন্টারন্যাশনাল। চলতি বছরের শুরুতে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া সত্ত্বেও উদ্বৃত্ত নতুন ও পুরাতন ক্যাবল পিডিবির কাছে হস্তান্তর না করে আত্মসাতের চেষ্টা করা হচ্ছিল।
অভিযানে দেখা যায়, ডিপোতে লাইট বন্ধ করে ২৪ ড্রাম ক্যাবল ট্রাকে লোডের চেষ্টা করা হচ্ছিল। দুই ড্রাম ট্রাকে ওঠানোর পর স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে স্থান থেকে ট্রাকে থাকা দুই ড্রাম, ট্রাক ও পিকআপসহ ৯ জনকে আটক করে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন ফরহাদ (৩০), রফিকুল ইসলাম (৪৪), শাকিল (২০), রঞ্জু (২৫), মোবারক (৩৪), তৈয়ব আলী (৩২), সিয়াম হাসান (১৯), আব্দুস সাত্তার (৩০) ও মোফাজ্জল হোসেন (২২)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বক্তব্য
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, “ভোররাতে অন্ধকারে ক্যাবল লোডের চেষ্টা চলছিল। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় আমরা পুলিশকে খবর দিয়েছি।”
নালিতাবাড়ী আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুল মোমিন বলেন, “এই ক্যাবলগুলো পিডিবির সম্পদ। কোনোভাবেই চুরি গ্রহণযোগ্য নয়। উদ্বৃত্ত ক্যাবল যথাযথ নিয়ম মেনে প্রকল্প অফিসে জমা দেওয়া উচিত।”
পুলিশ ও প্রশাসনের বক্তব্য
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা জানান, “ক্যাবলগুলো চুরির উদ্দেশ্যেই জমা না দিয়ে ভোররাতে গোপনে সড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আলামতসহ ৯ জনকে আটক করেছে। এরপর তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।”
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আটক ব্যক্তিরা তাদের নিয়োগকৃত, তবে প্রকৃত দায়িত্ব ও নির্দেশনার বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানাতে পারেননি।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ প্রকল্প সংক্রান্ত সম্পদ ও সরঞ্জামের চুরি এবং অনিয়মের ঘটনা নতুন নয়। এর আগে বিভিন্ন জেলায় পিডিবি ও অন্যান্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্যাবল ও সরঞ্জাম আত্মসাতের চেষ্টা ধরা পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক তদারকি ও নজরদারি না থাকলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এ ধরনের ঘটনা বিদ্যুৎ সংক্রান্ত প্রকল্পের সুনাম ও জনবিশ্বাস ক্ষুণ্ণ করে। শেরপুরের স্থানীয়রা বলেছেন, “সরকারি সম্পদের নিরাপত্তা ও তদারকিতে দুর্বলতা থাকলে এ ধরনের চুরি সহজেই ঘটতে পারে।”
স্থানীয় প্রশাসন বলেছে, ভবিষ্যতে সঠিক তদারকি ও নজরদারির মাধ্যমে এ ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধ করা হবে।
বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ
বিদ্যুৎ ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারি প্রকল্পে সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও তদারকি গুরুত্বপূর্ণ। জোরপূর্বক আত্মসাতের মতো ঘটনা রোধ করতে হলে প্রকল্প সংক্রান্ত সকল কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ বাধ্যতামূলক।
প্রকল্প ব্যবস্থাপকরা জানান, উদ্বৃত্ত ক্যাবল সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ম অনুযায়ী করা উচিত। ব্যক্তিগত স্বার্থে সম্পদ আত্মসাৎ করলে প্রকল্পের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় এবং জনসেবায় প্রভাব পড়ে।
শেরপুরে পিডিবির ক্যাবল চুরির এই ঘটনা সরকারি সম্পদের সুরক্ষা এবং প্রকল্প তদারকিতে দুর্বলতার নিদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে—এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে প্রশাসন কতটা কার্যকর ব্যবস্থা নেবে এবং ভবিষ্যতে সরকারি সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে কি না।
এম আর এম – ১৩৩২,Signalbd.com