দামেস্কে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ৬ সিরীয় সেনা নিহত

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের দক্ষিণে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় দেশটির ছয় সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল এল আকবরিয়া এই খবর নিশ্চিত করেছে। দামেস্কের উপকণ্ঠে আল–কিশওয়াহ শহরের পাশের সামরিক স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা সিরিয়ার সামরিক মহলে নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
এই হামলা ঘটে ঠিক একদিন পর, যখন সিরিয়ার সরকার পূর্বে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল। সূত্র zufolge, ড্রোন হামলার ফলে সেনা স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, এবং সিরিয়ার নিরাপত্তা সংস্থাগুলো হামলার তীব্রতা নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
সিরিয়ার সামরিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
সিরিয়া দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাশার আল–আসাদের শাসনাধীনে দেশটি যদিও কয়েকটি আঞ্চলিক সংঘাত থেকে স্থিতিশীলতার দিকে গিয়েছিল, তবে সম্প্রতি ইসরায়েলি হুমকি ও সামরিক আক্রমণের কারণে পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
ইসরায়েল সিরিয়ার বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা লক্ষ্য করে ড্রোন ও বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। বিশেষত গোলান মালভূমি এবং সিরিয়া-লেবানন সীমান্তবর্তী ‘অসামরিক বাফার জোন’ ইসরায়েলের নজরে রয়েছে। ১৯৭৪ সালের সই অনুযায়ী এই অঞ্চল শান্তিপূর্ণ রাখা হয়েছিল, কিন্তু ইসরায়েল সেখানে সামরিক কার্যক্রম বাড়িয়েছে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল মাউন্ট হারমন পাহাড়ের আশপাশের কৌশলগত এলাকা দখল করতে একাধিক অভিযান চালাচ্ছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে ৬০ জন সেনা সমন্বিত একটি ইসরায়েলি দল ওই এলাকায় প্রবেশ করে।
ইসরায়েলের ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ নীতি এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ বিষয়ে তাঁর নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। নেতানিয়াহুর ধারণা অনুযায়ী, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, গাজা, লেবানন, সিরিয়া, মিসর ও জর্ডানের কিছু অংশে নিজস্ব প্রভাব বিস্তার করতে চায়।
এই নীতি ইসরায়েলি জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছে। তবে ৩১টি আরব ও ইসলামিক দেশের জোট এবং আরব লিগ এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল–শাইবানি অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েল সম্প্রসারণবাদী ও বিভাজনমূলক নীতি গ্রহণ করছে। তার মতে, ইসরায়েল এমন এলাকায় সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনা তৈরি করছে যেখানে সাধারণ জনগণকে নিরাপদ ও নিরস্ত্র রাখা হয়েছিল।
দামেস্কের নিরাপত্তা এবং সামরিক প্রতিক্রিয়া
সিরিয়ার সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলি ড্রোন হামলা শুধু সামরিক উদ্দেশ্য নয়, এটি মানসিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য পরিকল্পিত। দামেস্কের নিরাপত্তা বাহিনী হুমকির মুখে তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে।
এছাড়া, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ইসরায়েলি হামলার সাথে গোলান মালভূমির কৌশলগত গুরুত্ব সম্পর্কিত বিশ্লেষণ করছেন। গোলান মালভূমি নদী, পাহাড় এবং সীমান্ত নিরাপত্তার কারণে রাজনৈতিক ও সামরিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত।
ড্রোন যুদ্ধের আধুনিকরণ এবং ইসরায়েলের কৌশল
ইসরায়েল সামরিক অভিযানে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ড্রোন হামলা দ্রুত, নজরবিহীন এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবিদ্ধ, যা আধুনিক যুদ্ধের ধরন পরিবর্তন করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলি ড্রোন হামলা সিরিয়ার ভেতরের সামরিক স্থাপনা ও প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে এবং এতে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতি সীমিত করার চেষ্টা করা হয়। তবে, সাম্প্রতিক হামলায় সৈন্যদের মৃত্যুর কারণে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ
ইসরায়েলের সামরিক হুমকি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগও বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বিশেষত সিরিয়া-ইসরায়েল সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
আরব লিগ এবং ইসলামিক দেশগুলোর জোট ইসরায়েলের পদক্ষেপকে অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি শুধুমাত্র সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব হ্রাস করছে না, বরং মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিও সৃষ্টি করছে।
ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদী নীতি অব্যাহত থাকলে সিরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে। দামেস্কের দক্ষিণে হামলা সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ইতিমধ্যেই সীমান্ত এলাকায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। পাশাপাশি ড্রোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও সামরিক কৌশল উন্নত করা হচ্ছে। আগামী কয়েক সপ্তাহে সিরিয়ার পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ এবং ইসরায়েলের সামরিক নীতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়ছে।
গুরুত্বপূর্ণ কী পয়েন্ট:
- দামেস্কের দক্ষিণে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ৬ সিরীয় সেনা কর্মকর্তা নিহত।
- হামলা ঘটেছে আল–কিশওয়াহ শহরের সামরিক স্থাপনায়।
- ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ার সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ড্রোন ও বিমান হামলা চালাচ্ছে।
- গোলান মালভূমি ইসরায়েলের সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় কেন্দ্রবিন্দু।
- সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েল সম্প্রসারণবাদী নীতি ও বিভাজনমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি, আর্থ-রাজনৈতিক ও সামরিক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
MAH – 12502 , Signalbd.com