গত এক মাসে ৬টি আরব দেশে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গত এক মাসে ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ছয়টি আরব দেশে বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। প্রতিদিনের মতো ফিলিস্তিনের গাজায় তীব্র বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল, পাশাপাশি লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, তিউনিসিয়া এবং কাতারেও সামরিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। আন্তর্জাতিক মহলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
গাজায় অব্যাহত বোমাবর্ষণ
ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিনই ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালাচ্ছে। লক্ষ্যবস্তু হিসেবে সেখানে বসতবাড়ি, শরণার্থী শিবির ও হামাসের ঘাঁটিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে তারা। এই হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন এবং হাজারো মানুষ আহত হয়েছেন। মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধের অভাবে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
লেবানন ও সিরিয়ায় হামলা
গাজার পাশাপাশি লেবানন ও সিরিয়ায়ও নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। লেবাননে হিজবুল্লাহর অবস্থানকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে টানা কয়েক দিন ধরে বিমান হামলার ফলে বহু মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের আশপাশেও একাধিকবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এতে সামরিক অবকাঠামোর পাশাপাশি বেসামরিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র।
ইয়েমেন ও তিউনিসিয়ায় ড্রোন হামলা
ইয়েমেনে ইরানপন্থি হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে ড্রোন হামলার ফলে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। অন্যদিকে, উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ায় গাজাগামী মানবিক সহায়তার একটি জাহাজকে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়। এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। মানবিক সহায়তার ওপর এ ধরনের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা।
কাতারের রাজধানী দোহায় হামলা
সর্বশেষ আলোচিত হামলার ঘটনা ঘটেছে কাতারের রাজধানী দোহায়। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে দোহায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। আকাশে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, তারা হামাসের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে। তবে কোন নেতাদের লক্ষ্য করা হয়েছে, তা তারা স্পষ্ট করেনি। হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দোহায় তাদের আলোচক দলকে উদ্দেশ্য করেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
কাতারের প্রতিক্রিয়া
হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার সরকার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক বিবৃতিতে বলেছেন, দোহায় ইসরায়েলের এই হামলা কাতারের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের আচরণ আন্তর্জাতিক আইন ও সব ধরনের মানবিক নীতির চরম লঙ্ঘন। কাতার এ ঘটনার কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ
ইসরায়েলের এসব হামলা নিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, মানবিক সহায়তার জাহাজে হামলা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও এ ধরনের কর্মকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ইসরায়েলের এই ধারাবাহিক হামলা মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল সামরিক অভিযানকে সীমিত অঞ্চলের মধ্যে আর ধরে রাখছে না। একে একে বিভিন্ন আরব দেশে হামলার ঘটনা প্রমাণ করছে, তারা আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের কৌশল নিচ্ছে। এর ফলে সংঘাতের পরিধি বাড়তে পারে এবং বহু দেশ সরাসরি যুদ্ধের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য বড় ধরনের মানবিক ও রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হবে।
পরিশেষে
গত এক মাসে গাজা থেকে শুরু করে লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, তিউনিসিয়া ও কাতার—মোট ছয়টি আরব দেশে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে শুধু আঞ্চলিক নিরাপত্তাই নয়, বরং আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এখন সবার চোখ মধ্যপ্রাচ্যের ওপর, পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে আগামী দিনগুলোতে বিশ্বশক্তি ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এম আর এম – ১২৫৭,Signalbd.com