মাইলস্টোন ট্রাজেডি: রোগীদের দেখতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে প্রধান উপদেষ্টা

রাজধানীর বিমান দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখতে শনিবার রাতে সেখানে যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিকিৎসাধীনদের অবস্থার খোঁজখবর নেন তিনি। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনাবহুল মাইলস্টোন ট্রাজেডির পর আহতদের দেখতে শনিবার রাতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যান দেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিকিৎসাধীনদের সান্ত্বনা দেন তিনি এবং তাদের পরিবারকে সাহস যোগান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৫ জনের অবস্থা উন্নতির দিকে হলেও এখনও ৩ জন রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রধান উপদেষ্টার হাসপাতালে আগমন
শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বার্ন ইনস্টিটিউটে পৌঁছান। সেখানে তিনি প্রত্যেক আহতের কাছে গিয়ে তাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসার মান ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অবহিত হন। প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দেন যে, সরকার আহতদের চিকিৎসার সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
ড. ইউনূস বলেন, “এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন বা আহত হয়েছেন তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেয়া হবে। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।”
দুর্ঘটনায় হতাহতের সর্বশেষ চিত্র
স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিমান দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে। আহতদের মধ্যে ১৮ জন বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ৩ জনের অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। ১৫ জনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং তাদেরকে পর্যায়ক্রমে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. নাসির উদ্দীন।
চিকিৎসার জন্য বিশেষ টিম
দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি রোগীর জন্য বিশেষ মেডিকেল টিম কাজ করছে। বর্তমানে সিঙ্গাপুর ও চীন থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছেন।
হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে রক্ত বা চামড়ার ডোনারের প্রয়োজন নেই। আহতদের চিকিৎসার সব ব্যয় সরকার বহন করছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার কড়াকড়ি
বার্ন ইনস্টিটিউট চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব এবং বিমান বাহিনী সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। ঘটনার পর থেকে হাসপাতাল এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কেবলমাত্র রোগীর স্বজনদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শোক
বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ রবিবার ও সোমবার দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ পুরো প্রতিষ্ঠান গভীর শোকাহত।
ট্রাজেডির পটভূমি
গত ২৫ জুলাই রাজধানীতে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। একটি প্রশিক্ষণ বিমানের ইঞ্জিন বিকল হয়ে তা আবাসিক এলাকায় আছড়ে পড়ে। এতে একাধিক বাড়ি ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনাস্থলেই বহু মানুষ প্রাণ হারান এবং অসংখ্য মানুষ আহত হন। উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করে।
ভবিষ্যত পদক্ষেপ
প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি আহতদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে বিমান চলাচল ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রযুক্তিগত মান যাচাই নিশ্চিত করা জরুরি।
সমাপ্তি
মাইলস্টোন ট্রাজেডির পর পুরো দেশজুড়ে শোক নেমে এসেছে। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে চিকিৎসক, স্বজন এবং সরকার সকলে একসঙ্গে কাজ করছেন। দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন ও ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা।
এম আর এম – ০৫৩৭, Signalbd.com