অর্থনীতি

রোজার আগের মাসে প্রবাসী আয় ২৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে

প্রবাসী বাংলাদেশিরা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ২৫২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার আয় পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই আয় ছিল ২১৬ কোটি ডলার। আগস্ট থেকে টানা সাত মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠানোর ধারা অব্যাহত রয়েছে।

প্রবৃদ্ধির ধারা ও পূর্ববর্তী মাসের তুলনা

এর আগে, জানুয়ারি মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার পাঠিয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারিতে এই আয় আরও বৃদ্ধি পেয়ে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত বহন করছে।

অর্থবছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়কালে প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ১,৮৪৯ কোটি ডলারে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এই আয় ছিল ১,৪৯৩ কোটি ডলার।

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ

গত আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সরকারের অধীনে বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়ার নানা উদ্যোগ, ব্যাংকিং চ্যানেলের সহজলভ্যতা এবং মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার কারণে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ধারা বজায় রয়েছে।

গত নভেম্বর মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২২০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের অক্টোবরে প্রবাসী আয় ছিল ২৩৯ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। এছাড়া, গত আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি এবং অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার দেশে আসে।

প্রবাসী আয়ের গুরুত্ব ও বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, রেমিট্যান্স হলো বৈদেশিক মুদ্রার একমাত্র দায়বিহীন উৎস, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কারণ, এই আয়ের বিপরীতে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয় না বা কোনো ঋণ পরিশোধের দায় থাকে না।

অন্যদিকে, রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার প্রবাহিত হলেও কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে তা খরচ করতে হয়। বিদেশি ঋণ পরিশোধেও ডলার প্রয়োজন হয়। ফলে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ফলে সরাসরি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়।

বর্তমানে দেশের ডলার সংকট মোকাবিলায় এই আয় অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতেও বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে।

সরকারের নীতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বর্তমান সরকার প্রবাসীদের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর উৎসাহ দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে, রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও সহজ ও দ্রুত করতে ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে এবং দেশের অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল হবে। প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দেশে বিনিয়োগ ও ভোগের হারও বাড়বে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button