অর্থনীতি

ট্রাম্পের বাজেট বিলকে বিরক্তিকর ও জঘন্য আখ্যা দিলেন মাস্ক

এমন কটাক্ষের পরও ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিলের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রয়েছে। প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, “মাস্কের অবস্থান সম্পর্কে আমরা আগে থেকেই জানি। সমালোচনা থাকলেও প্রেসিডেন্ট এই বিলের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছেন।” বিলটি ‘বিগ বিউটিফুল অ্যাক্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ট্রাম্প দাবি করেছেন, এটি আমেরিকান জনগণের কল্যাণের জন্য অপরিহার্য।

তবে সমালোচকরা বলছেন, এই বিল আসলে বিত্তবানদের আরও করছাড় দেয় এবং প্রতিরক্ষা খাতে অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ বৃদ্ধি করে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগণের কাঁধে অতিরিক্ত বোঝা চাপায়।

পাবলিকান দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজন

এই বিল নিয়ে শুধু ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে নয়, রিপাবলিকান দলের ভেতরেও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কেন্টাকির প্রভাবশালী সিনেটর রান্ড পল বলেন, “যদি ঋণসীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব থাকে, তাহলে আমি এই বিলের পক্ষে ভোট দেব না।” এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, “কেন্টাকির মানুষ পলকে সহ্য করতে পারে না, তার মতামত পাগলামির শামিল।”

এই মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়, দলীয় শৃঙ্খলার অভাব এবং বাজেট বিলকে ঘিরে নীতিগত মতপার্থক্য ক্রমেই তীব্র হচ্ছে।

স্টারলিংক বিতর্ক: স্বার্থের সংঘাত?

অন্যদিকে, অ্যাক্সিয়স জানিয়েছে যে, ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) ইলন মাস্কের স্টারলিংক স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, সরকারের দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি কোম্পানি থেকে প্রযুক্তি গ্রহণ করাকে স্বার্থের সংঘাত হিসেবে দেখছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে মাস্ক অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

সিনেটের সামনে চ্যালেঞ্জ ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ

বাজেট বিলটি এখন সিনেটে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তীব্র বিতর্ক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ডেমোক্র্যাট সদস্যরা ছাড়াও অনেক রিপাবলিকান নেতাও এই বিলের কিছু ধারার বিরুদ্ধে সোচ্চার। সিনেটর চাক শুমার বলেন, “ইলন মাস্ক নিজে এই প্রক্রিয়ার অংশ ছিলেন। তিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ। সেই তিনিই বলছেন বিলটি খারাপ। তাহলে আসলেই এটা কতটা খারাপ হতে পারে, তা ভাবতেই শঙ্কা জাগে।”

ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা চাইছেন, আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যেই এই বিল কংগ্রেসে পাস হয়ে আইনে পরিণত হোক। এ জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিকল্প পরিকল্পনাও দেওয়া হয়েছে—যেখানে বলা হয়েছে, ৯.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ কমানো হবে, যার মধ্যে বেশি কাটছাঁট হবে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, বিদেশি সহায়তা এবং এনপিআর ও পিবিএসের মতো মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে।

মাস্কের রাজনৈতিক হুঁশিয়ারি

শেষ পর্যন্ত মাস্ক এক রাজনৈতিক হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন, “যারা আমেরিকান জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, আগামী নভেম্বরে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।” এই মন্তব্য স্পষ্টতই রিপাবলিকান পার্টির অভ্যন্তরীণ বিভক্তি এবং জনরোষের ইঙ্গিত বহন করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইলন মাস্কের এই অবস্থান শুধু ট্রাম্প প্রশাসনের জন্যই নয়, বরং পুরো রিপাবলিকান পার্টির জন্য রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বাজেট বিলের ভাগ্য এখন সিনেটের উপর নির্ভর করলেও, এর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button