আবহাওয়া

সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি: বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিপজ্জনক সংকেত

বিগত কয়েক দশকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে সমুদ্রের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮০-এর দশকের তুলনায় বর্তমানে সমুদ্রের উষ্ণতা প্রায় ৪০০ গুণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ১৯৮৫ সাল থেকে স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য উঠে এসেছে।

উষ্ণায়নের হার ও কারণ

আশির দশকের শেষ থেকে প্রতি দশকে সমুদ্রের তাপমাত্রা প্রায় ০.০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। বর্তমানে এই হার বেড়ে প্রতি দশকে প্রায় ০.২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কার্বন ডাই–অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধির ফলে পৃথিবী বেশি শক্তি শোষণ করছে, যা সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ।

সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব

সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। উষ্ণ পানির কারণে প্রবাল প্রাচীরের সাদা হয়ে যাওয়া (কোরাল ব্লিচিং) এবং সামুদ্রিক প্রজাতির বিলুপ্তির ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া, সমুদ্রের অম্লীকরণ ও অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পাওয়ায় সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।

ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস ও উদ্বেগ

গবেষকেরা লক্ষ্য করেছেন, উষ্ণতা বৃদ্ধির হার রৈখিক নয়। গত ৪০ বছরে যে বৃদ্ধি হয়েছে, তা আগামী ২০ বছরের কম সময়ের মধ্যে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সমুদ্র টানা ৪৫০ দিন ধরে রেকর্ড উচ্চ তাপমাত্রা ধারণ করেছে।

সমাধান ও করণীয়

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সমুদ্রের উষ্ণায়নের গতি কমাতে বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন কমানো জরুরি। এছাড়া, সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি ও টেকসই মৎস্যচাষ পদ্ধতি গ্রহণ করাও গুরুত্বপূর্ণ।

সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই প্রবণতা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের একটি স্পষ্ট সংকেত। এটি শুধু সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র নয়, বরং মানব সমাজের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই, সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Check Also
Close
Back to top button