গত এক ঘন্টায় ১০টি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিতের দাবি ইরানের

ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে গত এক ঘণ্টায় ১০টি ইসরায়েলি সামরিক বিমান গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরান। শনিবার (১৪ জুন) রাতে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। খবরটি ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
ইরানের খাতাম আল-আম্বিয়া বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটির এক শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জানান, “গত এক ঘণ্টায় ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ১০টি শত্রু ড্রোন ও যুদ্ধবিমান শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি লক্ষ্য সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সমন্বিত অভিযানে।”
এই সামরিক সূত্র মতে, ভূপাতিত করা বিমানগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দা ও হামলাকারী ড্রোন। এরা ইরানের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত স্থাপনার ওপর নজরদারি এবং হামলার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।
আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটের সফলতা
ইরানি সেনাবাহিনীর জারি করা আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম এবং কেন্দ্রীয় আকাশসীমায় সক্রিয় থাকা শত্রুদের ড্রোন ও যুদ্ধবিমান লক্ষ্য করে আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিট যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে। ১০টি শত্রু বিমান সফলভাবে গুলি করে নামানো হয়েছে, যা আমাদের কৌশলগত সক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে।”
এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গুলি করে নামানো ড্রোনগুলোর মধ্যে কিছু ছিল ‘কামিকাজি ড্রোন’, যেগুলো সরাসরি হামলার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল। তবে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেগুলো আগেভাগেই শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ইসরায়েলের আগ্রাসন ও প্রতিক্রিয়া
উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন ভোর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিমান ও ড্রোন হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামলার লক্ষ্য ছিল মূলত ইরানের পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র, বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র গুদাম এবং দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এই হামলায় ইরানি সেনাবাহিনীর অন্তত ২০ জন শীর্ষ কমান্ডার নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ইরানের বিপ্লবী গার্ড (আইআরজিসি) এর উচ্চপদস্থ সদস্য ও বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন।
এই হামলার জবাবে ইরানও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইরানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ইসরায়েলের সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ ভেঙে ফেলেছে তারা এবং সরাসরি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে তা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এতে হতাহত হন বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা।
ইরানের কৌশলগত বার্তা
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই আক্রমণ ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। ইরান স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে, তার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত এবং সক্রিয়। পাশাপাশি এই অভিযানের মাধ্যমে তারা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার বার্তা পৌঁছে দিতে চাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক ড. হামিদ রেজা আলম বলেন, “ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পরমাণু কার্যক্রমকে রুখে দেওয়ার জন্য একতরফা আগ্রাসী নীতি অনুসরণ করছে। তবে ইরানের সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা কৌশল এবং প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলের সেই আগ্রাসনকে স্পষ্টভাবে চ্যালেঞ্জ করছে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পরপরই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো পরিস্থিতি গভীরভাবে নজরে রাখছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রাশিয়া মধ্যস্থতার আহ্বান জানালেও এখনও পর্যন্ত কোনও স্থায়ী সমাধানের ইঙ্গিত মেলেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতিতে এখনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও পেন্টাগনের সূত্র থেকে জানা গেছে, তারা অঞ্চলে সেনা প্রস্তুতি বৃদ্ধি করেছে।
উপসংহার
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান এই সামরিক উত্তেজনা এক নতুন মোড়ে পৌঁছেছে। একদিকে ইসরায়েলের আগ্রাসী অভিযান, অন্যদিকে ইরানের পাল্টা জবাব—সবকিছু মিলিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন গভীর উদ্বেগে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ না হলে এই সংঘাত আরও বিস্তৃত হয়ে পড়তে পারে।