জাতীয়

থামছেই না করোনায় মৃত্যু, বেড়েছে আক্রান্ত

দেশে আবারও বাড়ছে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের, আর নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে চলমান পরিস্থিতি।

সংক্রমণ ও মৃত্যুর হালনাগাদ

করোনাভাইরাস আবারও হালকা হলেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে দেশে। বুধবার (২ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২৭ জন।

এই সময়ে ৫১৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৫.২১ শতাংশ, যা গত মাসের তুলনায় কিছুটা বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ২৩ জন। এর মধ্যে সর্বশেষ নিহত ব্যক্তি সিলেট বিভাগের বাসিন্দা, বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। তিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মোট মৃত্যুর সংখ্যা ও আক্রান্তের চিত্র

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ২৯ হাজার ৫২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসে। একই সময়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১৫৪ জন।

২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬০৯ জন। যদিও এই সংখ্যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কম, তবে সাম্প্রতিক সময়ে সংক্রমণের ধারা আবারও বাড়ছে।

করোনার অতীত পরিস্থিতি ও বর্তমান প্রবণতা

করোনার প্রথম ধাক্কা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়েছে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। ২০২১ ও ২০২২ সালে ডেল্টা ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সময় হাসপাতালে জায়গা পাওয়া ছিল চ্যালেঞ্জ। সংক্রমণ কমে আসার পর ২০২৩ ও ২০২৪ সালে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল।

কিন্তু ২০২৫ সালের মাঝামাঝি এসে আবারও নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি সম্পূর্ণ নির্মূল না হওয়ায় সংক্রমণ মাঝেমধ্যে আবারও বাড়তে পারে।

হাসপাতাল পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রস্তুতি

সরকারি হাসপাতালগুলো এখনো করোনা ইউনিট সচল রেখেছে, যদিও চাপ অনেক কম। সুনির্দিষ্ট করোনা ওয়ার্ডে সংক্রমিত রোগীদের আলাদা রেখে চিকিৎসা চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে আছি। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা প্রস্তুত।”

জনসাধারণের করণীয় ও সতর্কতা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জনগণের মাঝে সতর্কতা আবারও কমে গেছে। মাস্ক পরার হার অনেক কমে গেছে, এমনকি অসুস্থ ব্যক্তিরা অনেক সময় আইসোলেশন মানছেন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আবারও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক ব্যবহার এবং প্রয়োজন হলে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন:
“করোনাভাইরাস এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। সংক্রমণ কমলেও ঝুঁকি থেকে যায়, বিশেষ করে বয়স্ক ও রোগপ্রবণ ব্যক্তিদের জন্য।”

টিকা কার্যক্রম ও নতুন পদক্ষেপ

সরকারি টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যারা এখনো বুস্টার ডোজ নেননি, তাদের দ্রুত টিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রয়োজনে আবারও গণটিকাদান কর্মসূচি চালু করা হবে, যদি সংক্রমণ আরও বাড়ে।

ভবিষ্যৎ করণীয় ও বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা একটি ‘এনডেমিক’ পর্যায়ে পৌঁছেছে — অর্থাৎ এটি পুরোপুরি নির্মূল না হলেও মৌসুমি বা সময়ভেদে ফিরে আসতে পারে। এ কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে স্থায়ীভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে।

সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করবে জনসচেতনতা, সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ এবং ভাইরাসটির চরিত্রের উপর।

শেষ কথা:


করোনার গ্রাফ আবারও ঊর্ধ্বমুখী। মৃত্যুর খবর মানেই নতুন করে সতর্ক হওয়ার সময়। প্রশ্ন হচ্ছে—আমরা কি প্রস্তুত? আমাদের ব্যক্তি সচেতনতা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পারস্পরিক সহযোগিতাই হতে পারে সংকট মোকাবেলার প্রধান হাতিয়ার।

এম আর এম – ০১৩৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button