বাংলাদেশ

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা সর্বোচ্চ দুই হাজার: পিনাকী ভট্টাচার্য

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহত মানুষের সংখ্যা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক উত্থাপন করেছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্য। রবিবার (১৭ আগস্ট) তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ওই সময় সর্বোচ্চ দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। তার এই মন্তব্য মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

ঘটনা ও পিনাকীর মন্তব্য

পিনাকী ভট্টাচার্য তার ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহত মানুষের সংখ্যা সর্বাধিক দুই হাজার। তিনি তার পোস্টে কিছু তথ্য ও প্রমাণও সংযুক্ত করেছেন এবং একটি ভিডিও কনটেন্ট শেয়ার করেছেন। এই মন্তব্যের পর থেকেই বিভিন্ন ব্যবহারকারী তার পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

কিছু ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন যে, এই ধরনের তথ্য জাতির ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। রবিউল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, “আপনার এই বক্তব্য ১৯৭১ সালের শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা।” অন্যদিকে রিয়াজ উদ্দিন নামের একজন মন্তব্য করেছেন, “অতিরঞ্জিত হয়ে গেল নাহ দাদা?”

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পাকিস্তানি সেনারা এবং তাদের দোসরদের হাত ধরে সেসময় অসংখ্য নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। সরকারি হিসাব এবং বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুসারে, প্রায় ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং দুই লাখেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটের কারণে পিনাকীর মন্তব্যে অনেকে সমালোচনা করছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো জাতীয় সচেতনতার জন্য ক্ষতিকর।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

পিনাকীর এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং শহীদদের স্মৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া মানুষরা তার এই মন্তব্যকে নিন্দার চোখে দেখেছেন। অনেকে বলেছেন যে, এ ধরনের মন্তব্য শুধুমাত্র ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা নয়, পাশাপাশি জাতীয় অনুভূতিতেও আঘাত করে।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষকরা বলছেন, শহীদ ও নির্যাতিতদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া কখনওই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা মনে করান যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের সহযোগী বাহিনীর নৃশংসতা এতটাই ব্যাপক ছিল যে, শহীদ ও নির্যাতিতদের সংখ্যা অনেক লাখের ওপর।

অন্যদিকে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের এমন বক্তব্যকে রাজনৈতিক বা বিতর্কিত উদ্দেশ্যপূর্ণ মন্তব্য হিসেবেও দেখা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করান, ইতিহাসের সংরক্ষণ ও তথ্য যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে এমন সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে।

গণমাধ্যমের দিকনির্দেশনা

দেশের গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী প্রায় সারাদেশে তাণ্ডব চালিয়েছিল। সরকারি তথ্য, গবেষণা ও প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মিলিয়ে দেখা যায়, শহীদ ও নির্যাতিতদের সংখ্যা বহু গুণ বেশি।

সংক্ষিপ্তসার

পিনাকী ভট্টাচার্যের এই মন্তব্য নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যদিও এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে, ইতিহাস ও গবেষণার আলোকে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত মানুষের সংখ্যা হাজার নয়, লাখের ওপর। বিশ্লেষকেরা মনে করাচ্ছেন, ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা রোধ এবং প্রকৃত তথ্য তুলে ধরাই জাতীয় সচেতনতার জন্য সবচেয়ে জরুরি।

“তবে বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে এ ধরনের বিতর্ক আরও বাড়তে পারে, এবং এটি মূলত জনগণের ইতিহাস সচেতনতা ও তথ্য যাচাই করার ওপর নির্ভর করবে।”

এম আর এম – ০৯০৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button