পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেবেন প্রবাসীরা ব্যালটে থাকবে শুধু প্রতীক

প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি ভোটারদের জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ চালু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ব্যালটে প্রার্থীর নামের পরিবর্তে থাকবে শুধু প্রতীক। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা ও নতুন পদক্ষেপ
গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, এবার প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভোটারদের কাছে যে ব্যালট পাঠানো হবে, তাতে প্রার্থীর নাম থাকবে না — শুধুমাত্র প্রতীক থাকবে। প্রার্থীদের নাম ও তথ্য অনলাইনে দেখতে পারবেন ভোটাররা।
তিনি আরও বলেন, “এটি বাস্তবায়নে আমরা প্রযুক্তি ও আইনি কাঠামো মিলিয়ে কাজ করছি। ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
কাদের জন্য থাকছে পোস্টাল ব্যালট সুবিধা
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিন শ্রেণির ভোটার এই পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার আওতায় আসবে:
- প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভোটার
- কারাগারে থাকা ভোটার
- ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
তবে এই সুবিধা নিতে হলে আগেই নির্ধারিত পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
ব্যালটে থাকবে শুধু প্রতীক, কেন এমন সিদ্ধান্ত
এই নির্বাচনে প্রার্থীর নাম বাদ দিয়ে শুধুমাত্র প্রতীক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রার্থীর নাম পরিবর্তনের সম্ভাবনা থেকে শুরু করে প্রিন্টিংয়ের সময় কমিয়ে আনা — এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কমিশনার আবুল ফজল বলেন, “ভোটের আগে শেষ মুহূর্তে যদি আদালতের আদেশে কোনো প্রার্থীর পরিবর্তন হয়, তাহলে পোস্টাল ব্যালটে তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই শুধু প্রতীক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
পোস্টাল ব্যালট বাস্তবায়নে খরচ ও চ্যালেঞ্জ
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থাটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে অনেক বেশি। প্রতিটি ব্যালটের আনা-নেওয়ার খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৫০০ টাকা। ছাপানো, প্রেরণ এবং প্রাপ্তি নিশ্চিতে নানা ধরণের খরচ রয়েছে।
কমিশনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, প্রতি এক লাখ ভোটারের জন্য খরচ হতে পারে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। এছাড়া রেজিস্ট্রেশন ও তথ্য যাচাই কার্যক্রমের জন্যও আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা হবে, যার সম্ভাব্য ব্যয় ৪৮ কোটি টাকার মতো।
প্রচারণা ও ভোটার সচেতনতায় পরিকল্পনা
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে প্রবাসীদের মধ্যে পোস্টাল ব্যালট সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, নিবন্ধন পদ্ধতি ও ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রচার শুরু হবে। এতে প্রবাসী দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা হবে।
কমিশনার বলেন, “আমরা চাই বিদেশে থাকা আমাদের নাগরিকরাও দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করুক। এজন্য যথাসময়ে তাদের কাছে ব্যালট পৌঁছে দিতে এবং ফিরিয়ে আনতে আমরা যথাসম্ভব দ্রুত ও স্বচ্ছ পদ্ধতি গ্রহণ করবো।”
ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি
নির্বাচন কমিশন আরও জানিয়েছে, ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী চলতি বছর অক্টোবরের ৩১ তারিখ পর্যন্ত যারা ১৮ বছর পূর্ণ করবে, তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে। ফলে আরও ১৮ থেকে ২০ লাখ তরুণ ভোটার আগামী নির্বাচনে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ের জন্য ইতোমধ্যেই মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে।
প্রবাসীদের অংশগ্রহণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটির বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৭০ লাখের বেশি কর্মজীবী প্রবাসী। তাদের অনেকেই ভোটার হলেও ভোট দেওয়ার সুযোগ পেতেন না। এবার প্রথমবারের মতো এই অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে যাচ্ছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক ধারায় বড় একটি পরিবর্তন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
একজন নির্বাচন বিশ্লেষক বলেন, “প্রবাসীদের ভোটার হিসেবে যুক্ত করা হলে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের হার যেমন বাড়বে, তেমনি সরকারের প্রতি দায়বদ্ধতাও বৃদ্ধি পাবে। এটি দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে।”
শেষ কথা
নির্বাচন কমিশনের এই নতুন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হলে তা হবে গণতন্ত্রকে আরও অংশগ্রহণমূলক করার এক বড় ধাপ। তবে ব্যয়, সময় ও লজিস্টিক জটিলতা— এই তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এই উদ্যোগ সফল করতে হবে কমিশনকে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—প্রবাসীদের কাছে পাঠানো ব্যালট সঠিকভাবে ফিরে আসবে তো? আর ভোটের গোপনীয়তা কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে? সব মিলিয়ে এই উদ্যোগ সফল হলে ভবিষ্যতের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে।
এম আর এম – ০৭৪৬, Signalbd.com