যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলি হামলা, ভোর থেকে শতাধিক নিহত

গতকাল দোহায় শুরু হওয়া গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি আলোচনার মাঝেই ফের ইসরায়েলের বিমানবাহিনী সকাল থেকেই বোমা বর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। আল-জাজিরা ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গেছে, বোমা হামলা শুরুর পর থেকে ১২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেক শিশু ও নারী রয়েছেন ।
ভোর থেকে চলছে আক্রমণ; হতাহতের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি
আজ রোববার ভোর থেকেই গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস, উত্তর গাজা ও মধ্যাঞ্চল—তিনটি অঞ্চলে একের পর এক বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল । সরকারি হাসপাতালসমূহ এবং উদ্ধারকারীরা বলছেন,
“হতাহতদের মধ্যে শিশু ও নারীও আছে; স্থানীয়রা এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন শুরু করছে।”
আশ্রয়শিবিরে আঘাত: ২৪ জনের মৃত্যু
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খান ইউনিসের বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়শিবির-এর এক তাঁবুতে বিমান হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন,
“আশ্রয়শিবিরের কয়েকটি তাঁবু স্থলমগ্ন হয়ে পুড়ে গেছে; আহতদের অবস্থা গম্ভীর।”
যুদ্ধবিরতি আলোচনা: অগ্রগতি নেই
গতকাল থেকেই কাতারের দোহায় ইসরায়েল এবং হামাসের প্রতিনিধিদের মধ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি আলোচনা এখনো কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি।
- সূত্র জানিয়েছে, উভয় পক্ষই নিজেদের মৌলিক দাবি থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে না।
- ফলে বন্দুকযুদ্ধে মানবিক দুর্যোগের মাত্রা বাড়ছে।
দুই মাস ধরে যুদ্ধবিরতির ভঙ্গ এবং পুরনো সংঘাত
২০১৮ সালের গত মার্চে আংশিক যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর ১৮ মার্চ ২০২৫ থেকে গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। সে থেকে ৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে গাজায় মোট ৫৩,০০০ জন হতাহত হয়েছেন ।
ইতিহাসের মড়ক: ২০২৩ সালের হামলা ও জিম্মি নির্যাতন
- ৭ অক্টোবর ২০২৩ এ হামাস সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায়; প্রতি চার্চে ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি করা হয়।
- প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় শুরু করে নিষ্ঠুর অভিযান, যেখানে আজ পর্যন্ত ৫৮ জন জিম্মি রয়েছে ।
মানবিক সংকট, ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যাওয়ার কোনো নিরাপদ রাস্তা নেই।
- দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি: খাদ্য, পানি, ও চিকিৎসাসামগ্রীর অভাবে ২১ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে ।
- অপুষ্ট শিশু: কঙ্কালসার চেহারা দেখা দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও চাপ
- জাতিসংঘ মহাসচিব: স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন: অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধের চাপ
- যুক্তরাষ্ট্র: মিশ্র বার্তা, মানবিক সহায়তা প্রবাহে চাপ
তবে এখনও কণ্ঠস্বরের বৈষম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে: রাজনৈতিক স্বার্থে সহিংসতা থামাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
শান্তি না এলে আরও রক্তপাত
দোহায় আলোচনার অগ্রগতি ব্যাহত থাকায় গাজার নিরপরাধ মানুষ প্রতিদিনই ফেনসিলার কবলে ছিটকে পড়ছে।
“যদি পরবর্তী কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।”
শান্তি সমঝোতা ছাড়া গাজা আরও বড় মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হবে—এটাই আন্তর্জাতিক মহলের আশঙ্কা।