বিশ্ব

পরবর্তী বৈঠক হবে জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউক্রেনের চলমান সংঘাত সমাধানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে পরবর্তী বৈঠক হবে। ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, এই বৈঠক হবে শান্তি আলোচনার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা আগামী দিনে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও বক্তব্য

ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার (১১ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, আগামী ১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি জানান, এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধবিরতি ও সংঘাতের সমাধানে পথ খোঁজা। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, পরবর্তী সরাসরি আলোচনা হবে জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে অথবা জেলেনস্কি, পুতিন ও তার নিজস্ব উপস্থিতিতে।

ট্রাম্প বলেন, “আমি পুতিনকে একান্তে যুদ্ধ বন্ধ করার আহবান জানাবো। যদি ন্যায্য ও যৌক্তিক প্রস্তাব আসে, তবে আমি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক আলোচনা করব। অন্যথায় যুদ্ধ চলতেই থাকবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমার পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকে জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে আমি জেলেনস্কিকেও ওই আলোচনায় যুক্ত করব।”

ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত ও আন্তর্জাতিক চাপে

২০১৪ সালে ক্রিমিয়া সংযুক্তির পর থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সম্পর্ক ক্রমেই অবনতি শুরু হয়। ২০২২ সালের শুরুতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ স্কেলে সামরিক অভিযান চালায়, যা আজও থামেনি। যুদ্ধের ফলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু এবং লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো এই সংঘাত সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং ন্যাটো রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, অন্যদিকে রাশিয়া নিজেকে আক্রমণের থেকে রক্ষা করার দাবি জানিয়ে আসছে।

ট্রাম্পের এই বৈঠক নতুন করে আলোচনার দ্বার খুলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

জেলেনস্কি ও মোদির ফোনালাপ

এরই মাঝে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। জেলেনস্কি মস্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ায় ভারতের সহযোগিতা কামনা করেছেন এবং বিশেষ করে রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি সীমিত করার আহবান জানিয়েছেন, যাতে যুদ্ধ চালানোর অর্থনৈতিক সক্ষমতা কমে যায়।

ভারত এখনও যুদ্ধবিরতি ও শান্তিপ্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে আসছে। মোদি জেলেনস্কিকে বলেছেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সকল পক্ষকে সংলাপে বসতে হবে।

সামরিক অবস্থা ও সাম্প্রতিক সংঘর্ষ

যুদ্ধক্ষেত্রে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রুশ বাহিনী কিছু এলাকায় দখল বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। গত কয়েকদিনে দোনেৎস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার আরও একটি বসতি দখলের দাবি করেছে তারা, যা ইউক্রেন নেতারা প্রত্যাখ্যান করেছে।

তবে ইউক্রেনীয় সেনারা দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রুশ সেনাদের সঙ্গে ফ্রন্টলাইনে অন্তত ১৩৭ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে তারা। পাশাপাশি, কিয়েভের সামরিক শক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়ার আরজামাসে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে।

বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের উদ্যোগ শান্তি প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তবে এটির সফলতা অনেকটাই নির্ভর করবে পুতিন ও জেলেনস্কির ইচ্ছাশক্তির ওপর। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, রাজনৈতিক স্বার্থ, জাতীয় গর্ব, এবং সামরিক কৌশল যেকোনো মুহূর্তে আলোচনার ফলাফল ব্যর্থ করতে পারে।

বিশ্ব রাজনীতির নানা মহলের নজর এখন আলাস্কার সেই বৈঠকের দিকে, যা যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি নতুন সূচনা হতে পারে।

ভবিষ্যৎ করণীয় ও সম্ভাবনা

ট্রাম্পের এই বৈঠক মূলত একটি প্রাথমিক আলোচনা বলে মনে করা হচ্ছে, যেখানে পক্ষগুলো নিজেদের অবস্থান ও প্রস্তুতি পরীক্ষা করবে। এর পরবর্তী পর্যায়ে জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে সরাসরি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যুদ্ধবিরতি বা শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনা অপরিহার্য, যা দীর্ঘদিনের সংঘাত থেকে উত্তরণের পথ খুলে দিতে পারে। তবে যুদ্ধের বাস্তবতা, সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় এ প্রক্রিয়া খুবই জটিল।

বিশ্লেষকদের মতে, শিগগিরি জেলেনস্কি-পুতিন বৈঠক বাস্তবায়িত হলে বিশ্ব শান্তি ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।

এম আর এম – ০৮২৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button