২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে হবে

২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও বোনাসসহ সকল পাওনা পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া মার্চ মাসের বেতনের কমপক্ষে ১৫ দিনের বেতন মালিকপক্ষ তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী দেবেন।
বুধবার (১২ মার্চ) আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর পূর্ববর্তী শ্রম পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং শিল্প সেক্টরের শ্রমিকদের বেতন, বোনাস ও ছুটি সংক্রান্ত পর্যালোচনার জন্য ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি) এর ৮৫তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রাজধানীর বিজয়নগর শ্রম ভবনে আয়োজিত সভায় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ থেকে ৭টি বিষয়ে যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়:
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ:
১। আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর এর পূর্বে কোনো শ্রমিককে চাকরিচ্যুত বা ছাঁটাই করা যাবে না।
২। কারখানার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক প্রতিনিধিরা আলোচনা করে শ্রম আইন অনুযায়ী দ্রুত ঈদের ছুটি নির্ধারণ করবেন। এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী কারখানার সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করা হবে।
৩। শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, বোনাসসহ সকল পাওনা ২০ রমজানের মধ্যে কারখানা কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে। শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতনের কমপক্ষে ১৫ দিনের বেতন মালিকপক্ষ তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী দেবে।
৪। বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএসহ মালিক পক্ষের ক্যাশ ইনসেনটিভ বাবদ সরকারের কাছে পাওনা পরিশোধের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হবে।
৫। আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ, ছুটি সংক্রান্ত বিষয়সহ সার্বিক পরিস্থিতির ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় সজাগ দৃষ্টি রাখবে।
৬। সার্বিক পরিস্থিতি কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গঠিত কমিটির পাশাপাশি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শ্রম) এর নেতৃত্বে একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। কমিটিতে শ্রমিক-মালিক পক্ষের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
৭। বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমঘন এলাকায় ২৮-০৩-২০২৫ থেকে ২৯-০৩-২০২৫ তারিখ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো খোলা রাখতে হবে।
শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ
শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্তগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শ্রম) জানিয়েছেন, শ্রমিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এবং মালিকপক্ষ একসঙ্গে কাজ করছে।
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ প্রতিনিধিরা বলছেন, শ্রমিকদের সময়মতো বেতন-বোনাস পরিশোধের জন্য তারা সচেষ্ট থাকবেন। তবে, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন তারা।
শিল্প মালিকদের প্রতিক্রিয়া
শিল্প মালিকরা জানিয়েছেন, শ্রমিকদের যথাসময়ে বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে, রপ্তানি নির্ভর শিল্পগুলোর জন্য ক্যাশ ইনসেনটিভ দ্রুত পরিশোধ করা হলে এটি আরও সহজ হবে। তারা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে দ্রুত প্রণোদনার অর্থ পরিশোধ করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মনিটরিং
ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এবং কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শিল্প এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হবে এবং প্রয়োজনে বিশেষ নজরদারি রাখা হবে।
এই উদ্যোগগুলো শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা ও শিল্পখাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।