বিশ্ব

কলকাতায় আইন কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণ, পাহারায় ছিলেন দুই ছাত্র

ভারতের দক্ষিণ কলকাতার সাউথ কলকাতা ল কলেজে এক ছাত্রীকে ক্যাম্পাসের ভেতরেই ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই জঘন্য অপরাধ সংঘটনের সময় অভিযুক্ত প্রধান ব্যক্তিকে পাহারা দিচ্ছিলেন কলেজের দুই ছাত্র। ঘটনার পর শহরজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। ইতোমধ্যেই তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ঘটনার মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র — যিনি ওই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সাবেক সভাপতি। অভিযোগে বলা হয়েছে, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন তিনি। এ সময় বাইরে থেকে পাহারা দিচ্ছিলেন বর্তমান দুই ছাত্র, জইব আহমেদ ও প্রমিত মুখার্জি।

ঘটনার সময় ও স্থান


ঘটনাটি ঘটে ২৫ জুন, বুধবার। ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে কলেজে যান ভুক্তভোগী ছাত্রী। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি ভয়াবহ মোড় নেয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণ।

স্থান ছিল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন কক্ষ ও নিরাপত্তারক্ষীর একটি ঘর। অভিযুক্ত মনোজিৎ প্রথমে ছাত্রীকে কথাবার্তার জন্য ডেকে নিয়ে যান এবং এক পর্যায়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রত্যাখ্যান করার পরই শুরু হয় ভয়াবহতার সূচনা।

ভুক্তভোগীর অভিযোগে বিস্তারিত


ভুক্তভোগীর বয়ান অনুযায়ী, মনোজিৎ তার সঙ্গে ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলার কথা বলে একটি ঘরে নিয়ে যান। কিছু সময় পর তিনি তার সঙ্গে থাকা দুই ছাত্রকে ইশারায় বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করতে বলেন। এরপর কক্ষে একা পেয়ে ওই ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন তিনি।

ওই সময় তরুণী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন, কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে চান, এমনকি ধাক্কা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টাও করেন। কিন্তু অতিরিক্ত ভয়ের কারণে শ্বাসকষ্টে ভোগেন এবং এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। যদিও তিনি চিকিৎসা সেবার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু কোনো সহানুভূতি দেখানো হয়নি। বরং পরে ইনহেলার এনে দিয়ে তাকে আরও কিছুক্ষণ কক্ষে আটকে রাখা হয়।

শেষপর্যন্ত তাঁকে নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিরাপত্তারক্ষীকে বের করে দেওয়া হয় এবং ওই ঘরেই আবার ধর্ষণ করেন মনোজিৎ। পুরো ঘটনার সময় বাইরে পাহারায় ছিলেন অপর দুই অভিযুক্ত।

ব্ল্যাকমেইল: ভিডিও রেকর্ড করে হুমকি


ঘটনার আরও ভয়াবহ দিক হলো, ধর্ষণের সময় মনোজিৎ ভিডিও ধারণ করেন এবং পরবর্তীতে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। মুখ বন্ধ রাখতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এমনকি ছাত্রীকে জানানো হয়, কিছু বললে তাঁর প্রেমিককে হত্যা করা হবে এবং মা–বাবাকে গ্রেপ্তার করানো হবে।

অভিযোগ দায়ের ও পুলিশি ব্যবস্থা


পরদিন, ২৬ জুন ভুক্তভোগী ছাত্রী কলকাতার কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর দেওয়া তথ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। এরপর দ্রুত অভিযান চালিয়ে মনোজিৎ ও জইবকে তালবাগান এলাকা থেকে এবং প্রমিতকে রাতেই তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের চারদিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল সিল করে দিয়েছে। অভিযুক্তদের মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়েছে তদন্তের স্বার্থে।

মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত মিলেছে


পুলিশ জানায়, মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের আলামত পাওয়া গেছে। ফলে অভিযোগপত্রে বর্ণিত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইন অনুযায়ী মামলা প্রক্রিয়া চলছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: উত্তপ্ত রাজনীতি


এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন শুরু হয়েছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ জানিয়েছে, মনোজিৎ আর দলের কোনো পদে নেই এবং তারা অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছে। দলীয় বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “অপরাধীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”

অন্যদিকে, বিরোধী দল বিজেপি কড়া সমালোচনায় মুখর। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, “গত বছর আর জি কর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল। রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা নেই। এবার মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।”

তদন্তে নজর রাখছে নারী কমিশন


ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন (NCW) কলকাতা পুলিশ কমিশনারের কাছে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, “নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে এর দায় নিতে হবে প্রশাসনকেই।”

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা: প্রশ্নের মুখে কর্তৃপক্ষ


ঘটনা ঘটেছে একটি সরকারি কলেজের ভেতরে, তাও দিনের আলো ফুরানোর পর। প্রশ্ন উঠছে — কিভাবে শিক্ষার্থী, প্রাক্তন ছাত্র, এমনকি নিরাপত্তারক্ষীর উপস্থিতিতে এত বড় অপরাধ সংঘটিত হলো? নিরাপত্তা কোথায়? প্রশাসনের নজরদারি কোথায়?

এই ঘটনার পর থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা ও মনিটরিং আরও বাড়ানোর দাবি তুলেছেন অনেকে।

শেষ কথা


কলকাতা আইন কলেজে ছাত্রী ধর্ষণের এই ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, বরং এটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ও নারীদের সুরক্ষা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি এবং বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই এখন জনগণের প্রধান দাবি।

এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

এম আর এম – ০০৭৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button