ট্রাম্প পরিবারের ক্রিপ্টো সাম্রাজ্য: ৫০০ কোটি ডলারের সম্পদ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার পরিবারের নাম আজ ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে বিশেষভাবে আলোচিত। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বকালীন সময়ে ব্যক্তিগত ব্যবসায় যে লাভের সুযোগ তৈরি করেছিলেন, সেই প্রভাব এখন ক্রিপ্টো দুনিয়ায় প্রতিফলিত হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে ট্রাম্প পরিবার যে নতুন ক্রিপ্টো উদ্যোগ চালু করেছে, তা মাত্র কয়েক মাসে তাদের সম্পদের মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছে দিয়েছে।
ট্রাম্প পরিবারের ক্রিপ্টো উদ্যোগ: ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল
ট্রাম্প ও তার দুই ছেলে মিলিয়ে গত বছর ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল নামের ক্রিপ্টো কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানির মূল লক্ষ্য হলো ট্রাম্পের নাম ও ব্র্যান্ড ব্যবহার করে ক্রিপ্টো টোকেন বাজারজাত করা। সম্প্রতি তাদের নতুন টোকেন $WLFI পাবলিক ট্রেডের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারছেন।
ট্রাম্পের এই ক্রিপ্টো উদ্যোগ মূলত তার প্রেসিডেন্সিয়াল প্রভাব ও ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভর করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের নাম ব্যবহার করেই এই টোকেনের বাজারজাতকরণ তাদের জন্য বিপুল অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করেছে।
চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্প একটি ‘মিম কয়েন’ চালু করেন। এছাড়া নিজের নামে লাইসেন্সকৃত বিভিন্ন পণ্য—জুতা, ঘড়ি, গিটার, বাইবেল ইত্যাদি—বিক্রির মাধ্যমে তিনি ক্রমবর্ধমান আয়ের উৎস তৈরি করেছেন।
$WLFI টোকেন: বিনিয়োগ এবং বিতর্ক
$WLFI টোকেনের মাধ্যমে যে কেউ সহজেই ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পেতে পারে এবং তা সরাসরি ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আয় বাড়াতে সহায়ক। ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশনের সাবেক ব্যাংকিং রেগুলেটর রস ডেলস্টন বলেন,
“আগে মার-এ-লাগোতে যোগ দিতে হতো। এখন ঘরে বসেই বিনিয়োগ করা যায়। ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা এত সহজ কখনও হয়নি। তবে এতে ঝুঁকিও রয়েছে—কেউ হয়তো সন্দেহজনক, কেউ হয়তো অপরাধী বা বিদেশি রাষ্ট্রের হয়ে কাজ করছে।”
ডেমোক্র্যাট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন এই বিষয়কে সরাসরি ‘দুর্নীতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, ট্রাম্প পরিবার ক্রিপ্টো টোকেনের মাধ্যমে যে ৫০০ কোটি ডলারের লাভ করেছে, তা প্রকাশ্যেই বিতর্কের বিষয়।
হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া
হোয়াইট হাউস বারবার এই সমালোচনা অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বা তার পরিবারের সদস্যরা কখনও স্বার্থ সংঘাতের মধ্যে নেই বা থাকবেন না। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ক্রিপ্টো বাজারে ট্রাম্প পরিবারের সক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং এটি ভবিষ্যতে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে।
বাজারের প্রতিক্রিয়া
ওয়ার্ল্ড লিবার্টির টোকেন বাজারে আসলেও তা এখনও ক্রিপ্টো দুনিয়ায় বড় সাড়া ফেলতে পারেনি। প্রথমদিকে টোকেনের দাম ৩২ সেন্ট পর্যন্ত উঠলেও, বর্তমানে তা ২২ সেন্টে নেমে এসেছে।
তবে কোম্পানি জানিয়েছে, ট্রাম্প পরিবারের সদস্যরা এখনও নিজেদের টোকেন বিক্রি করতে পারছেন না। পাবলিক ট্রেড শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের জন্য টোকেন বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর ফলে সরাসরি লাভের সুযোগ এখনো সীমিত।
তবুও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ ট্রাম্প পরিবারের জন্য ক্রিপ্টো শিল্প থেকে দীর্ঘমেয়াদি আয়ের নতুন পথ খুলেছে।
ট্রাম্প ও ক্রিপ্টো: এক সময়ের বিরোধী থেকে সমর্থক
কয়েক বছর আগেও ট্রাম্প ক্রিপ্টোকে ‘স্ক্যাম’ বা প্রতারণার মাধ্যম বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়েছিলেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি ক্রিপ্টো-সমর্থক কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। এমনকি আর্থিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর ওপরও ক্রিপ্টো শিল্পকে সহায়ক নীতি প্রণয়ন করিয়েছেন।
বাইডেন প্রশাসনের অধীনে ক্রিপ্টো কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) অনেক ক্রিপ্টো সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। এর ফলে হতাশ ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীরা ২০২৪ সালের নির্বাচনে ব্যাপক অর্থ ব্যয় করে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দেন।
ট্রাম্প পরিবারের ক্রিপ্টো কৌশল
ট্রাম্প ও তার পরিবারের শুরু করা ক্রিপ্টো উদ্যোগগুলো তাদের একটি সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছে। প্রশাসনের শিথিল নিয়মকানুনের সুযোগ নিয়ে তারা সহজেই লাভবান হচ্ছেন।
এখন ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত ও প্রেসিডেনশিয়াল ক্রিপ্টো স্বার্থকে মেলাতে পারছেন, এবং তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। এটি ট্রাম্পকে আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখছে এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারেও সহায়ক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ক্রিপ্টো বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প পরিবারের এই উদ্যোগ ক্রিপ্টো দুনিয়ায় নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকা দরকার। কারণ ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে সরাসরি বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকলেও, এটি রাজনৈতিক ও আর্থিক ঝুঁকি সহকারে আসে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প পরিবারের জন্য এটি শুধুমাত্র আর্থিক লাভের বিষয় নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির একটি মাধ্যমও বটে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার পরিবার ক্রিপ্টো জগতে তাদের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছেন। ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল এবং $WLFI টোকেনের মাধ্যমে তারা ক্রিপ্টো দুনিয়ায় একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করছেন। যদিও বাজারে এখনও সম্পূর্ণ সাড়া পড়ে নি, তবে তাদের লাভ এবং প্রভাব ইতিমধ্যেই স্পষ্ট।
এই ক্রিপ্টো উদ্যোগ শুধু আর্থিক দিক থেকে নয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের দিক থেকেও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে ট্রাম্প পরিবারের এই ক্রিপ্টো কৌশল বিশ্ব অর্থনীতি ও মার্কিন রাজনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
MAH – 12647, Signalbd.com