বিগত নির্বাচনে অনিয়মকারী কমিশনের ২০০ কর্মকর্তাকে বদলি

নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ। পাশাপাশি নির্বাচন সরঞ্জাম সংগ্রহ ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ কাজ চলছে জোরেশোরে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় বড় সিদ্ধান্ত
বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ২০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ইসি সচিব মো. আখতার আহমেদ।
তিনি বলেন, “সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের ভেতর থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০০ জনকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় রদবদল করা হয়েছে।”
আগের নির্বাচন এবং অনিয়মের অভিযোগ
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন স্থানে ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, প্রভাব খাটানোসহ নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। বিরোধী দলগুলো কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, এমনকি বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবার কমিশন নির্বাচনপূর্ব প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চলমান প্রস্তুতি
ইসি সচিব জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশনের একাধিক প্রস্তুতি পরিকল্পনা চলছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, যা আগস্টের মধ্যেই শেষ করার কথা রয়েছে।
এছাড়া নির্বাচনী সরঞ্জাম সংগ্রহ, সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং প্রশিক্ষণের আয়োজনও রয়েছে কর্মপরিকল্পনার মধ্যে। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফরে আসবে বলে তিনি জানান।
বদলির প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
২০০ কর্মকর্তার একযোগে বদলির খবরে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে এটিকে কমিশনের ‘আত্মশুদ্ধির’ অংশ হিসেবে দেখলেও কেউ কেউ একে রাজনৈতিক চাপে নেওয়া সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন।
তবে ইসি সচিব দাবি করেছেন, “এটি কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। আমাদের নিজেদের ভেতর থেকেই সৎ ও দায়িত্ববান কর্মকর্তা বাছাইয়ের প্রয়াসে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
পরিসংখ্যান ও প্রাসঙ্গিক তথ্য
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে মাঠপর্যায়ে প্রায় ৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। এর মধ্যে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে যারা নির্বাচনের সময় দায়িত্বে থাকেন, তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কমিশনের এক অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত নির্বাচনে প্রায় ৮ শতাংশ কর্মকর্তা বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম বা দায়িত্বে গাফিলতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই তথ্যের ভিত্তিতেই বদলির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণের দৃষ্টিভঙ্গি
নির্বাচনী বিশ্লেষক ড. কামরুল হাসান বলেন, “কমিশনের এ ধরনের উদ্যোগ সাধারণত খুব কম দেখা যায়। এটি ইতিবাচক, তবে এই বদলিগুলো কেবল প্রতীকী না হয়ে যেন কার্যকর প্রভাব ফেলে, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে দেশের জনগণের মধ্যে যে অনাস্থা রয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে হলে শুধু বদলি নয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির দৃষ্টান্ত তৈরি করাও জরুরি।
সারসংক্ষেপ
নির্বাচনী অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ২০০ কর্মকর্তার বদলি নিঃসন্দেহে একটি বড় পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যৎ নির্বাচনের প্রতি আস্থার জায়গা গড়তে পারে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ বাস্তবিক পরিবর্তন আনবে কি না, তা নির্ভর করবে কমিশনের ধারাবাহিক কার্যক্রম ও মনোভাবের ওপর।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বদলির পরেও যদি জবাবদিহিতা না থাকে, তাহলে এমন পদক্ষেপ জনগণের আস্থা অর্জনে যথেষ্ট নাও হতে পারে।
এম আর এম – ০৬৮২, Signalbd.com