হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রতারণার ফাঁদ, সতর্ক করলো ডিএসই

হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে পুঁজিবাজারে প্রতারণা করছে অসাধু চক্র। এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্য করে নতুন ধরণের প্রতারণার কৌশল শুরু করেছে অসাধু চক্র। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দিয়ে অনেকে শেয়ার কেনা-বেচায় প্রলোভনের ফাঁদে পড়ছেন। এ পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্কতা জারি করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। সংস্থাটি বলছে, অনুমোদিত ব্রোকারেজ হাউস ও অফিসিয়াল অ্যাপ ছাড়া শেয়ার কেনাবেচার অন্য কোনো মাধ্যম বৈধ নয়।
ডিএসই’র সতর্কবার্তা
ডিএসই থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিনিয়োগকারীদের ভুল তথ্য দিয়ে প্রভাবিত করা হচ্ছে। এসব গ্রুপ থেকে অনেকে শেয়ার কেনাবেচায় বাড়তি লাভের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন বলে মনে করলেও শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ডিএসই স্পষ্ট করে বলেছে, শেয়ার বা সিকিউরিটিজ লেনদেনের বৈধ উপায় কেবল অনুমোদিত ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান এবং ডিএসই মোবাইল অ্যাপ। এর বাইরে কোনো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হলে তা অবৈধ এবং প্রতারণার শামিল।
প্রতারণার ধরণ
গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নিজেকে শেয়ার মার্কেট বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে কিছু ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। তারা প্রতিদিন শেয়ার কেনা-বেচার সুপারিশ দিচ্ছে এবং অতিরিক্ত লাভের আশ্বাস দেখাচ্ছে। শুরুতে হয়তো কিছু বিনিয়োগকারী সামান্য লাভ পেলেও পরে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এছাড়া, অনেক সময় এসব গ্রুপ থেকে ভুয়া লেনদেনের তথ্য ছড়িয়ে শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো বা কমানোর চেষ্টা করা হয়, যা পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।
বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকি
বিশেষজ্ঞদের মতে, হোয়াটসঅ্যাপ বা অনানুষ্ঠানিক গ্রুপভিত্তিক পরামর্শে নির্ভর করলে বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে পড়েন। কারণ এসব তথ্যে কোনো প্রমাণিত বিশ্লেষণ বা অফিসিয়াল অনুমোদন থাকে না।
এতে যেমন বিনিয়োগকারীদের কষ্টার্জিত অর্থ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি পুঁজিবাজারের সামগ্রিক স্থিতিশীলতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডিএসই তাই বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
পূর্বে এমন প্রতারণার নজির
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে এর আগে ফেসবুক পেজ, অনলাইন ফোরাম ও টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। সেইসব ঘটনায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এবার হোয়াটসঅ্যাপকে ব্যবহার করে একই কৌশল নেওয়া হচ্ছে।
ডিএসই ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি অতীতেও এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। তবে প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় প্রতারণার নতুন ধরণ তৈরি হচ্ছে বারবার।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপ
ডিএসই ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ব্রোকারেজ হাউস, সিডিবিএলসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাও প্রতারণাকারীদের সনাক্ত করতে কাজ করছে।
বিএসইসি কর্মকর্তাদের মতে, প্রতারণার শিকার হলে বিনিয়োগকারীরা যেন দ্রুত অভিযোগ করেন, তা নিশ্চিত করতে প্রচারণা জোরদার করা হবে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতায় এসব গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এখানে রাতারাতি লাভের কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই যেসব ব্যক্তি অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখাচ্ছে, তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এক বিশ্লেষক বলেন, “পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চাইলে অবশ্যই বৈধ ও অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই করতে হবে। অন্যথায় প্রতারণা থেকে বাঁচা সম্ভব নয়।”
বিনিয়োগকারীদের করণীয়
ডিএসই জানিয়েছে, প্রতিটি বিনিয়োগকারীকে সচেতন থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারও প্রলোভনে পড়ে বিনিয়োগ করলে নিজের অর্থের ঝুঁকি বাড়বে। অফিসিয়াল ব্রোকারেজ হাউস ও ডিএসই মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার ছাড়া শেয়ার কেনাবেচার অন্য কোনো পদ্ধতি অনুসরণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, “পুঁজি আপনার, বিনিয়োগও আপনার। তাই অসাধু চক্রের ফাঁদে পড়ে কষ্টার্জিত অর্থ প্রতারণার ঝুঁকিতে ফেলবেন না।”
শেষ কথা
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা পুঁজিবাজারে বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। তাই বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বাড়ানো এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি শক্তিশালী করাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হতে পারে। আগামীতে এ ধরনের প্রতারণা কতটা ঠেকানো যায়, তা নির্ভর করবে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপের ওপর।
এম আর এম – ১০২৯, Signalbd.com