বাবার সামনেই ভাইয়ের চোখ তোলার ভিডিও ভাইরাল, নেপথে যে কারণ

বরিশালের মুলাদী উপজেলায় এক অমানবিক ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। পারিবারিক বিরোধের জেরে রিপন ব্যাপারী (৩৬) নামের যুবকের দুই চোখ বাবার উপস্থিতিতে উপড়ে ফেলা হয়েছে। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি সর্বাধিক নজর কেড়েছে। অভিযুক্ত তার মেজ ভাই রোকন ব্যাপারী ও ছোট ভাই স্বপন ব্যাপারী। বর্তমানে গুরুতর আহত রিপন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার বিস্তারিত
মুলাদী থানার এসআই মাসুদ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা ঘটেছে গত শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাতের দিকে নাজিরপুর ইউনিয়নের সাহেবেরচর গ্রামে ব্যাপারী বাড়িতে। রিপন তাঁর মেজ ভাই রোকনের কাছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা এবং ২০ ভরি স্বর্ণ গচ্ছিত রেখেছিলেন। টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে পারিবারিক বিরোধের শুরু হয়।
শুক্রবার রাতে বাবা আশেদ ব্যাপারীর উপস্থিতিতে ঝগড়া নতুনভাবে তীব্র হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, বাবা রিপনকে মারধরের নির্দেশ দেন এবং রোকন ও স্বপন মিলে তার দুই চোখ উপড়ে ফেলে। রিপনের ছেলে আব্দুর রহমান অভিযোগ করেছেন, “চাচারা বাবার সাথে মিল করে আমার বাবার চোখ কেড়ে নিয়েছে।”
নেপথ্য কারণ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পরিবারে আর্থিক লেনদেন এবং পারিবারিক বিরোধই মূল কারণ। রিপনের দাবি অনুযায়ী, তিনি বহুদিন ধরে তার মেজ ভাই রোকনের কাছে টাকা ও স্বর্ণ রাখতেন। ফেরত চাওয়ার পর তাদের মধ্যে বিরোধ উস্কে ওঠে। বিভিন্ন সালিশ বৈঠকেও সমাধান হয়নি।
পুলিশের তথ্যমতে, পারিবারিক আর্থিক সমস্যা এবং আগের বিরোধই চোখ উপড়ে ফেলার নেপথ্য কারণ। বাবা আশেদ ব্যাপারীর নির্দেশে অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় বিষয়টি আরও নৃশংস রূপ নিয়েছে।
অভিযুক্তদের পরিচয়
ঘটনার পর অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, মেজ ভাই রোকন এবং ছোট ভাই স্বপন আগেও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। থানা সূত্রে জানা যায়, রিপনের বিরুদ্ধে ঢাকায় রমনা থানায় চুরি-ছিনতাইয়ের ৮টি মামলা এবং মুলাদী থানায় হত্যা মামলাসহ অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে।
পুলিশি পদক্ষেপ
মুলাদী থানা পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে। এসআই মাসুদ বলেন, “পলাতক অভিযুক্তদের ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। ভিডিও ও প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখনও মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।”
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
গ্রামের লোকজন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের জন্য এমন নৃশংসতা প্রত্যাশিত নয়। এলাকাবাসী মনে করছেন, পরিবারের মধ্যেই যদি এমন ঘটনা ঘটে, তা সমাজের জন্য সতর্কবার্তা।
একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “এটি কেবল এক ব্যক্তির নয়, পুরো সমাজের জন্য বিপজ্জনক উদাহরণ। পারিবারিক সহমর্মিতা এবং ন্যায়বিচার কতটা জরুরি, তা এ ঘটনায় প্রতিফলিত হচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, পারিবারিক আর্থিক দ্বন্দ্ব থেকে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটতে পারে। বাবা ও ভাইদের মধ্যে ক্ষমতা ও অর্থ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত দ্বন্দ্ব কিশোর বা যুবকদের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
একজন অপরাধবিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, “এ ধরনের নৃশংসতা প্রতিরোধের জন্য সামাজিক সচেতনতা, পরিবারের মধ্যে সমঝোতা এবং মানসিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। না হলে ঘটনা বারবার ঘটতে পারে।”
পরিশেষে
মুলাদী উপজেলায় ঘটে যাওয়া এই নৃশংস ঘটনায় সামাজিক শোক ও প্রতিক্রিয়া ছড়িয়েছে। বাবার নির্দেশে ভাইদের হাতে হত্যাকাণ্ডের চরম নৃশংসতা ঘটার ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি এবং তদন্তের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে এ ধরনের অপরাধের বিচার ও ভবিষ্যতে পরিবারের মধ্যকার সংঘাত রোধের পথ।
এম আর এম – ১০৬৬, Signalbd.com