মোহাম্মদ সিনওয়ারের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করল হামাস

গাজার হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি। শনিবার হামাসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে মোহাম্মদ সিনওয়ারের অবস্থান সমাপ্ত হলো।
গত মে মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, তাদের সামরিক অভিযানে মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। তবে তখন হামাস পক্ষ থেকে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা হয়নি। কয়েক মাস পর হামাস নিজেই এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করল এবং মোহাম্মদ সিনওয়ারের সঙ্গে কয়েকজন কমান্ডারের ছবি প্রকাশ করে তাঁদের ‘শহীদ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
মোহাম্মদ সিনওয়ারের এই মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক এবং সামরিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। গাজার শীর্ষ নেতা হিসেবে সিনওয়ার দীর্ঘদিন ধরে হামাসের সশস্ত্র শাখার নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি গাজার নিরাপত্তা ও ইসরায়েলি সেনা অভিযানের প্রতিরোধে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন।
মোহাম্মদ সিনওয়ার: জীবন ও রাজনৈতিক পথচলা
মোহাম্মদ সিনওয়ার ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত হন। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ইয়াহিয়ার মৃত্যুর পর তিনি গাজায় হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। সিনওয়ার দীর্ঘদিন ধরে গাজার নিরাপত্তা, সামরিক পরিকল্পনা এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা ও হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতেন। তাঁর নেতৃত্বে হামাসের সশস্ত্র শাখা বেশ কয়েকটি বড় সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও বারবার তার খোঁজের চেষ্টা করেছিল।
ইসরায়েলের অভিযানের প্রভাব
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৫ সালের মে মাসে ঘোষণা করেছিল, তাদের সামরিক অভিযানে মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। যদিও তখন হামাসের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা হয়নি। তবে সাম্প্রতিক আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে জানা যায়, সিনওয়ারের মৃত্যু সত্য।
ইসরায়েলি অভিযানের পর গাজার উত্তরে এবং শহরের বিভিন্ন অংশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। হামাসের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। সিনওয়ারের মৃত্যুর পর গাজার সাধারণ মানুষ এবং ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
নতুন নেতৃত্ব: ইজ্জ আল-দিন হাদ্দাদ
মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হওয়ার পর তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইজ্জ আল-দিন হাদ্দাদ গাজার হামাসের সশস্ত্র শাখার দায়িত্ব নেবেন। হাদ্দাদ বর্তমানে গাজার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান তত্ত্বাবধান করছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হাদ্দাদের নেতৃত্বে হামাসের সামরিক কর্মকাণ্ড কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। তিনি সিনওয়ারের নীতি ও কৌশল বজায় রাখার চেষ্টা করবেন, তবে নতুন প্রজন্মের কৌশল এবং প্রতিরক্ষা নীতি প্রয়োগ করবেন।
ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক ও সামরিক প্রেক্ষাপট
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘর্ষের পটভূমিতে এই হত্যাকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। গাজার হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হারানো ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য বড় অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত।
ফিলিস্তিনি জনগণ মনে করছেন, সিনওয়ার শহীদের মতো মর্যাদাপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। হামাসের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ সিনওয়ারকে শহীদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক আন্দোলন এবং সাধারণ মানুষের মনোবল শক্তিশালী হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশ এই ঘটনার প্রতি গভীর মনোযোগ দিচ্ছে। বিশেষ করে মিসর ও অন্যান্য আরব রাষ্ট্র গাজার পরিস্থিতি মনিটর করছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সিনওয়ারের মৃত্যুর প্রভাব বিশ্লেষণ করছেন। তারা মনে করছেন, গাজার সামরিক নেতৃত্বে পরিবর্তন সাময়িকভাবে সংঘর্ষের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোহাম্মদ সিনওয়ারের নেতৃত্বে হামাস শক্তিশালীভাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ করেছে। তাঁর মৃত্যু নতুন কৌশল এবং নেতৃত্বের শীর্ষে পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিতে পারে। তবে গাজার ভেতরে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এখন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
গাজার নতুন নেতা ইজ্জ আল-দিন হাদ্দাদের সামনে এখন গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তিনি সিনওয়ারের নীতি বজায় রাখার পাশাপাশি নতুন নিরাপত্তা ও সামরিক কৌশল প্রয়োগ করবেন। এছাড়া গাজার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হামাসের সামরিক কার্যক্রম এখন কিছুটা সীমিত হতে পারে। তবে নতুন নেতৃত্বের অধীনে হামাসের কার্যক্রম আরও সংগঠিত ও শক্তিশালী হতে পারে। গাজার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘর্ষের পরবর্তী পর্যায় আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হবে।
MAH – 12565, Signalbd.com