ফরিদপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৩

ফরিদপুরের সদর উপজেলায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের করিমপুর এলাকায় দুই যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন যাত্রী।
ঘটনাস্থলে কী ঘটেছিল?
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকাগামী রয়েল এক্সপ্রেস নামে একটি দূরপাল্লার বাস এবং ফরিদপুর থেকে মাগুরাগামী রিক এন্টারপ্রাইজ নামের একটি লোকাল বাস করিমপুর ফিলিং স্টেশনের কাছে এসে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে উভয় বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে করিমপুর হাইওয়ে থানা ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। উদ্ধার কাজ শেষে আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তিনজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
দুর্ঘটনার কারণ কী ছিল?
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দু’টি বাসই দ্রুতগতিতে চলছিল এবং একটি ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল। মহাসড়কের ওই অংশে কোনো ট্রাফিক সিগনাল বা স্পিড ব্রেকার না থাকায়, উভয় চালকই নিয়ন্ত্রণ হারান এবং মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। তবে পুলিশ বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখছে।
হাইওয়ে থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আমরা দুর্ঘটনাকবলিত বাসদ্বয়ের গতি, চালকদের অবস্থা ও সড়কের কাঠামো নিয়ে বিস্তারিত যাচাই করছি। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহেরও চেষ্টা চলছে।”
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি: এটাই কি প্রথম?
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা নতুন নয়। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। শুধু ২০২৪ সালেই বাংলাদেশে প্রায় ৪,০০০-এর বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে প্রাণহানি ঘটে ৪,৮০০ জনের। ফরিদপুর অঞ্চলেও আগেও একাধিক বড় দুর্ঘটনার নজির রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো অপ্রশিক্ষিত চালক, যানবাহনের ত্রুটি এবং সড়কের অপরিকল্পিত নকশা। পাশাপাশি, অতিরিক্ত গতিতে চালানো এবং ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতাও এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পরপরই স্থানীয় এলাকাবাসী মহাসড়কে জড়ো হন। তারা দুর্ঘটনার জন্য পরিবহন মালিকদের গাফিলতিকে দায়ী করেন। অনেকেই বলেন, প্রতিদিন এই সড়কে বিভিন্ন বাস অতিরিক্ত গতিতে চলে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আনতে কেউ পদক্ষেপ নেয় না।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “দুটি বাসই খুব দ্রুত চলছিল। হঠাৎ একটা শব্দ, তারপর শুধু ধোঁয়া আর আর্তনাদ। আমরা দৌঁড়ে গিয়ে দেখি দুটো বাস একে অপরের সঙ্গে গেঁথে আছে।”
সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা কী?
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও কার্যকর বাস্তবায়ন এখনো দৃশ্যমান নয়। যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা, চালকদের লাইসেন্স যাচাই এবং মহাসড়কে নজরদারি ব্যবস্থা অনেক সময়েই গাফিলতির কারণে প্রভাবহীন হয়ে পড়ে।
পরিবহন বিশ্লেষকরা বলছেন, “শুধু দুর্ঘটনা ঘটার পর ব্যবস্থা নিলে হবে না। প্রতিটি জেলা পর্যায়ে সড়ক নিরাপত্তা সেল গঠন, নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ জরুরি।”
তদন্ত ও পরবর্তী পদক্ষেপ
দুর্ঘটনার পরপরই পুলিশ বাসদ্বয়কে রাস্তা থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসা চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার বিষয়ে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। চালকদের রক্ত পরীক্ষা, চালকের লাইসেন্স ও বাসের রেজিস্ট্রেশন যাচাইসহ নানা দিক থেকে তদন্ত চলছে। দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সারসংক্ষেপ
ফরিদপুরের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমাদের সড়ক ব্যবস্থা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্ঘটনা কি শুধুই ভাগ্যের বিষয়, নাকি আমরা সচেতন হলে বহু জীবন বাঁচানো যেত? এখন সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার — নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন কি কেবল কাগজে থাকবে, না বাস্তবে রূপ নেবে?
এম আর এম – ০৫১১, Signalbd.com