লিফটের ওপর বাড়তি কর প্রত্যাহারে দ্রুত পদক্ষেপ চায় সংশ্লিষ্টরা

২০২৫-২৬ অর্থবছরের সরকারি বাজেটে লিফটকে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে রেখে তার ওপর বাড়তি শুল্ক ও কর আরোপের প্রস্তাবে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ এলিভেটর, এসকেলেটর অ্যান্ড লিফট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলিয়া)। তাদের দাবি, লিফটকে আবারও মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং বাড়তি শুল্ক-কর প্রত্যাহার করতে হবে, যাতে দেশের আবাসন ও নির্মাণ খাতের উন্নয়নে বাধা না পড়ে।
লিফট খাতে করহার বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো শিল্পশৃঙ্খলা
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি এমদাদ উর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম উজ্জ্বল উপস্থিত থেকে বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত লিফটকে মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে আমদানি করা হতো, যার ফলে শুল্কহার ছিল তুলনামূলক কম। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে হঠাৎ লিফটকে বাণিজ্যিক পণ্যের তালিকায় রাখা হয়, যা শুল্ক-কর বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে লিফট আমদানিতে শুল্ক-কর বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ, যা আগের ২৫.৭৫ শতাংশের থেকে অনেক বেশি।
বেলিয়ার নেতারা বলেন, “আমাদের কাছে জুনের আগে বহু লিফট আমদানির প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ লিফটগুলো তখন ২৫.৭৫ শতাংশ শুল্কহারে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন নতুন করহার হিসাবে ৪৩ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।”
বাড়তি কর আরোপে বাড়বে লিফটের দাম, ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভোক্তা ও নির্মাণ খাত
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম উজ্জ্বল বলেন, “লিফট দেশের আবাসন খাতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে লিফটের বাজার মূল্য বাড়বে, যা ভোক্তাদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এতে পুরো আবাসন খাতের উন্নয়ন ধীরগতি হবে এবং হাজার হাজার শ্রমিক ও ব্যবসায়ী প্রভাবিত হবেন।”
তারা আরও জানান, আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্যায়ন ও বাড়তি শুল্ক-কর আরোপের কারণে আমদানিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, যা অবিলম্বে পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন।
লিফট শিল্পের ভবিষ্যৎ: মূলধনি যন্ত্রপাতি থেকে বাণিজ্যিক পণ্য শ্রেণি
২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে লিফটকে মূলধনি যন্ত্রপাতি থেকে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করায় শুল্ক-কর বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলধনি যন্ত্রপাতির শ্রেণিতে থাকলে আমদানি শুল্ক থাকে অনেক কম, যা শিল্পের উন্নয়নে সহায়ক। তবে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে শ্রেণীকরণ হওয়ায় করহার বেড়ে শিল্পে অতিরিক্ত বোঝা পড়েছে।
বেলিয়া’র দাবি ও সরকারের প্রতি অনুরোধ
বেলিয়া তাদের এই সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে জোরালো আবেদন করেছে—
- লিফটকে আবারও মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে পুনর্ব্যবহৃত করতে হবে।
- আগের মতো ২৫.৭৫ শতাংশ শুল্কহার প্রযোজ্য রাখতে হবে।
- ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত বাড়তি শুল্ক-কর প্রত্যাহার করতে হবে।
- আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শুল্ক-কর নির্ধারণ করতে হবে।
এমন দাবি ছাড়া দেশের নির্মাণ খাত, বিশেষ করে আবাসন খাতের দ্রুত ও স্থায়ী উন্নয়ন অসম্ভব হবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
লিফটের গুরুত্ব: নিরাপত্তা ও আরামদায়ক জীবনের অঙ্গ
আজকের যুগে আবাসন, অফিস, হাসপাতালসহ নানা স্থাপনায় লিফট ছাড়া জীবনযাত্রা অচল। লিফটের মাধ্যমে বহু মানুষ প্রতিদিন তাদের কাজের জায়গায় নিরাপদে ও দ্রুত পৌঁছাতে পারে। তাই লিফট খাতে সুষ্ঠু নীতি ও করহার নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি। বাড়তি কর আরোপে এই জরুরি সেবা ব্যাহত হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি ও করনীতি
বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে লিফটকে মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় এবং করের ক্ষেত্রে স্বল্প হার ধার্য করা হয়। এতে করে নির্মাণ খাত দ্রুত বিকশিত হয় এবং বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে লিফট পাওয়া সম্ভব হয়। বাংলাদেশের জন্যও একই নীতি গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
একতাবদ্ধ হয়ে লিফট খাতের জন্য সুষ্ঠু করনীতি প্রয়োজন
বেলিয়া’র এই দাবিগুলো শুধুমাত্র একটি পেশাদার সংগঠনের অনুরোধ নয়, বরং দেশের আবাসন খাতের টেকসই উন্নয়ন এবং সাশ্রয়ী নির্মাণ খাতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সরকারের উচিত সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, যাতে লিফট খাতে বাড়তি করের বোঝা দূর হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।