সমন্বয়ক ও জামায়াত নেতা পরিচয়ে জেলা প্রশাসনকে হুমকি, ২ মাসের কারাদণ্ড

ওসমানীনগরে নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ও জামায়াত নেতা পরিচয় দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হুমকি ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মাহবুবুর রহমান (৩২) নামের এক যুবককে দুই মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জয়নাল আবেদীন এ দণ্ড প্রদান করেন।
ঘটনার বিস্তারিত
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের ওসমানীনগরের সাদীপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মাহবুবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক এবং জামায়াত নেতা পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। এই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বিভিন্ন প্রকার অবৈধ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
বিশেষ করে উপজেলার ভূমি অফিসে গিয়ে বিভিন্ন কাগজপত্রে নামজারি ও অন্যায় সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করতেন তিনি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার দাবিতে সাড়া না দিলে তিনি ছাত্রদের নিয়ে অফিস ঘেরাও করা, ভাঙচুর করা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির হুমকি দিতেন।
সোমবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত
সোমবার দুপুরে তিনি আবারো উপজেলা ভূমি অফিসে উপস্থিত হয়ে একইভাবে কর্মকর্তাদের হুমকি দিতে শুরু করলে বিষয়টি সরাসরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নজরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তোলা হয়। আদালতে তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করেন এবং জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তিনি জানান, এই কাজে তাকে উসকে দিয়েছিলেন স্থানীয় ডা. আব্দুল লতিফ ও আমান আহমদ নামের দুজন ব্যক্তি।
আদালতের রায়
ভ্রাম্যমাণ আদালত সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি ও হুমকি দেওয়ার অপরাধে দণ্ডবিধির ১৮৬ ধারায় তাকে দুই মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করে। দণ্ড ঘোষণার পরপরই তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, “মাহবুবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত নেতা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কর্মকর্তাদের হুমকি দিচ্ছিলেন। সোমবার আবারও হুমকি দেওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়দের অনেকেই প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই যুবক তার পরিচয় ব্যবহার করে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছিলেন। তার শাস্তি দেওয়ায় সাধারণ মানুষ স্বস্তি পেয়েছে।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “সরকারি কাজে বাধা দেওয়া এবং প্রশাসনকে ভয় দেখানো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আজকের এই শাস্তি অনেকের জন্য শিক্ষণীয় হবে।”
উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাহবুবুর রহমান গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সময় ভূমি অফিসে এসে এমন হুমকি দিচ্ছিলেন। বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর আগে তার নামে কোনো মামলা হয়নি, তবে মৌখিকভাবে অনেক অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল।
প্রশাসনের কঠোর বার্তা
ঘটনার পর ইউএনও বলেন, সরকারি কাজে কোনো ধরনের অনিয়ম, চাপ বা হুমকি সহ্য করা হবে না। যেই হোক না কেন, আইনের বাইরে কেউ নয়।
তিনি আরও জানান, “সরকারি সেবা পেতে হলে নিয়ম মেনে আসতে হবে। কেউ যদি বল প্রয়োগ করে বা প্রশাসনকে ভয় দেখিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে চায়, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভবিষ্যতে করণীয়
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সতর্ক রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে কেউ প্রশাসনকে প্রভাবিত করার জন্য রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয় ব্যবহার না করতে পারে।
সারসংক্ষেপ
ওসমানীনগরের এ ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল যে সরকারি কাজে বাধা বা ভয়ভীতি প্রদর্শন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি জনগণের আস্থা রাখতে হলে আইন সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর হওয়া জরুরি।
এম আর এম – ০৫৭১, Signalbd.com