বছরে কোটি টাকা আয় করেন, এমন ৬৭ শতাংশ মানুষ কর দেন না

বাংলাদেশে বছরে কোটি টাকা আয় করা মানুষের মধ্যে ৬৭ শতাংশই কর দেন না। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের আয় কোটি টাকার বেশি হলেও তারা করজালের বাইরে রয়েছেন। এই ফাঁপা করজাল দিয়ে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানো সম্ভব নয়।”
গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য
‘ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব কথা বলেন। তিনি ২০১৮ সালের সিপিডির একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে কোটি টাকা আয় করা মানুষের করজালের বাইরে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
আলোচনা সভার আয়োজন
নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪ ডটকম আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠক আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানের এমসিসিআই সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হকের সঞ্চালনায় এই আলোচনায় অংশ নেন বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য রেজাউল হাসান, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমই সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ প্রমুখ।
সরকারের কর নীতির সমালোচনা
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মন্তব্য করেন, “সম্প্রতি শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়িয়ে সরকার দুর্নাম অর্জন করেছে।” তিনি জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য থেকে গত ছয় মাসে ৮৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। আইএমএফ চাপ দিচ্ছে রাজস্ব বাড়াতে, কিন্তু সরকার করজাল না বাড়িয়ে পরোক্ষ কর বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
রাজস্ব বৃদ্ধির বিকল্প
সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, “রাজস্ব বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের অন্য কোনো বিকল্প ছিল কি না, তা দেখতে হবে। শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়ানোর ফলে ১১ হাজার বা সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব পাওয়া যাবে, কিন্তু এতে রাজস্বের ঘাটতি পূরণ হবে না।”
কর প্রশাসনের সংস্কার
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে কর প্রশাসন অটোমেশন করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। সংস্কারে কর প্রশাসনের কোনো আগ্রহ নেই। এখানে ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। নিজেদের অসংগতি দূর করতে না পারলে কর আদায় বাড়বে না।”
দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের প্রত্যাশা
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বা রাজস্ব খাতে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের উদ্যোগ নিলে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার এসে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে পারবে।” তিনি সম্পদ কর আরোপের পক্ষেও মত দেন।
এই আলোচনা সভায় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা অংশ নেন এবং দেশের কর ব্যবস্থা নিয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। আশা করা যায়, সরকারের উদ্যোগে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে এবং করজালের আওতায় আসবে অধিক সংখ্যক মানুষ।