বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়: সিলেটে আবারও ২০০ রানের নিচে গুটিয়ে গেল টাইগাররা

ঘরের মাঠে টেস্টে ব্যাটিং ভরাডুবির পুনরাবৃত্তি
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ যেন নিজের খেই হারিয়ে ফেলছে। ব্যাটিং নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন থাকলেও ঘরের মাঠে এখন সেই দুর্বলতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান টেস্টের প্রথম ইনিংসে টাইগাররা অলআউট হয়েছে মাত্র ১৯১ রানে। এটি দেশের মাটিতে টানা ব্যর্থ ব্যাটিংয়ের আরেকটি সংযোজন।
ব্যাটিং ধসের চেনা দৃশ্য
শেষ আটটি হোম টেস্ট ইনিংসের মধ্যে ছয়বারই বাংলাদেশ ২০০ রানের নিচে অলআউট হয়েছে—যা দলের ব্যাটিং গভীর সংকটের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।
আজকের ম্যাচেও সেই একই গল্পের পুনরাবৃত্তি। শুরুটা ভালো হলেও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে সিনিয়রদের দায়িত্বহীন ব্যাটিং আরও একবার প্রশ্ন তুলেছে—এই দল আদৌ প্রস্তুত তো পাঁচদিনের ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য?
মুশফিক–মুমিনুলদের দায়িত্বজ্ঞানহীন শট
অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম যে বলে আউট হয়েছেন, সেটি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে হালকা মুভ করা একটি ডেলিভারি। সেটি ফোর হিট করার বদলে তিনি ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরেছেন। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, এমন বলে আউট হওয়া না শুধুই দৃষ্টিকটু, বরং পুরো দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মুমিনুল হকও কম যাননি। তিনি একাধিকবার জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত তিনি উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে ফিরে আসেন। এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা হতাশ করেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের।
টপ অর্ডার ব্যর্থ, মিডল অর্ডার গড়তে পারেনি জুটি
বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের চিত্র ছিল এমন—
- শুরুতেই টপ অর্ডারের ব্যর্থতা
- মাঝে ছোট ছোট কিছু পার্টনারশিপ
- কিন্তু তা কখনোই ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি
জাকির হাসান কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও বড় ইনিংস গড়তে পারেননি। শান্ত, লিটন, মিরাজ সবাই এসেছেন, দেখিয়েছেন সম্ভাবনা, আবার ফিরে গেছেন দ্রুত।
জিম্বাবুয়ের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং
বাংলাদেশের এমন ভঙ্গুর ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কৃতিত্ব দিতে হবে জিম্বাবুয়ের বোলারদের। বিশেষ করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ধারাবাহিকভাবে লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে চাপ তৈরি করেন। টাইগারদের মিডল অর্ডার ভেঙে দেওয়ার পেছনে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, পেসার মুজারাবানি শুরুতেই ব্রেকথ্রু এনে দেন। পরে স্পিনার চিসোরা ও মাধেভেরাও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে উইকেট তুলে নেন।
পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের হোম টেস্ট ব্যাটিং
- সর্বশেষ ৮ হোম ইনিংসের ৬টিতে বাংলাদেশ ২০০ রানের নিচে অলআউট
- ২০২৪ সালের পর ঘরের মাঠে টাইগারদের সর্বোচ্চ ইনিংস: ২৬৫
- এই সময়কালে দলের গড় প্রথম ইনিংস সংগ্রহ: মাত্র ১৮৯ রান
এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, সমস্যা আর বিচ্ছিন্ন কিছু নয়—এটি এখন প্যাটার্নে পরিণত হয়েছে।
দলীয় মনোভাবেও ঘাটতি?
বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, টাইগারদের ব্যাটিং ধস কেবল কারিগরি ঘাটতির ফল নয়—বরং মানসিক দৃঢ়তা, জয়ের ইচ্ছা এবং টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি শ্রদ্ধার অভাবও দায়ী।
এক ক্রিকেট বিশ্লেষক বলেন,
“যখন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরাও এমন ভাবে আউট হন, তখন তরুণদের শেখার জায়গা কোথায়?”
সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ
এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশের বোলাররা কতটা প্রতিরোধ গড়তে পারেন এই তুলনামূলক কম রানে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিপক্ষকে চাপের মধ্যে ফেলার মতো যথেষ্ট রান নেই বোর্ডে। এমন অবস্থায় সিলেট টেস্টের প্রথম দিন থেকেই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে জিম্বাবুয়ে।
বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট এখন এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। প্রতিপক্ষ যত দুর্বলই হোক না কেন, নিজেদের ঘরের মাঠে এমন দুর্বল ব্যাটিং টিকে থাকার বার্তা দেয় না। কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে ক্রিকেট বোর্ড—সবাইকে এখন প্রশ্ন করতে হবে: সমস্যা কোথায়, সমাধানই বা কী?
যদি দ্রুত কোনো পরিবর্তন না আসে, তবে ভবিষ্যত আরও অন্ধকার।