জাতীয়

আসিফ মাহমুদের গুলির ম্যাগাজিন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে প্রশ্ন

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বিমানবন্দরে গুলিভর্তি ম্যাগাজিন বহনের ঘটনাটি শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে এক বিদেশি সাংবাদিক প্রশ্ন তুললে, বিষয়টি নতুন মাত্রা পায়। এছাড়াও একই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পরিস্থিতি ও ধর্মীয় স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়েও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কৌশলী অবস্থান

ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক সরাসরি প্রশ্ন করেন, “সম্প্রতি কোয়াড জোটের বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলেন। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত, খিলক্ষেতে হিন্দু মণ্ডপ উচ্ছেদ এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের গুলির ম্যাগাজিন বহনের প্রেক্ষাপটে আপনাদের প্রতিক্রিয়া কী?”

উত্তরে মুখপাত্র তামি ব্রুস সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে সাংবাদিককে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতি দেখার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কিছু জটিল বিষয় রয়েছে। কূটনৈতিক সৌজন্য রক্ষা করেই আমরা এসব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।”

ঘটনাটি কীভাবে ঘটলো?

রবিবার ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামে’ অংশ নিতে মরক্কো যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছান আসিফ মাহমুদ। বোর্ডিংয়ের আগে স্ক্যানারে তার ব্যাগে একটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন ধরা পড়ে। পরে তিনি সেটি প্রটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করে বিমান যাত্রা করেন।

নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “প্যাকিংয়ের সময় লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের সঙ্গে একটি ম্যাগাজিন রেখে আসলেও ভুলবশত আরেকটি ম্যাগাজিন ব্যাগেই রয়ে যায়। বিষয়টি একেবারেই অনিচ্ছাকৃত ছিল। স্ক্যানে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি সেটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেছি।”

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ও প্রশ্ন

ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক মাধ্যমে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে, এত কড়াকড়ি নিরাপত্তা পেরিয়ে একজন ভিআইপি কীভাবে একটি গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন বহন করতে পারলেন — তা নিয়ে চলছে আলোচনা। অনেকেই বলছেন, যদি এটি স্ক্যানারে ধরা না পড়তো এবং তিনি বিদেশে পৌঁছে যেতেন, তাহলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তো।

একজন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ বলেন, “বিমানবন্দর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বহু স্তরের চেকিং রয়েছে। গুলিভর্তি ম্যাগাজিন নিয়ে কেউ বিমানে উঠলে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সেই ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হতে পারত।”

অস্ত্রের লাইসেন্স ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

অনেকেই জানতে চাচ্ছেন, আসিফ মাহমুদ কখন ও কীভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন। অস্ত্র লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ী সাধারণ নাগরিকদের জন্য লাইসেন্স পেতে হলে কমপক্ষে ৩০ বছর বয়স এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়কর প্রদানসহ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। যদিও সরকারিভাবে পদমর্যাদার বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো যেতে পারে।

তবে সাধারণ প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও কেন তিনি ব্যক্তিগত অস্ত্র রাখেন, এবং তার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কতটা জানেন — এসব বিষয় নিয়েও জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অবস্থান

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, যেকোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র বা গোলাবারুদ বিমানে বহনের জন্য পূর্বঘোষণা ও বৈধ কাগজপত্র দেখানো বাধ্যতামূলক। একজন কর্মকর্তা বলেন, “ভুলক্রমে কেউ গুলি নিয়ে এলেও সেটা এয়ারক্রাফটে তোলা সম্ভব না। নিয়ম অনুযায়ী সেটি ঘোষণা দিয়ে হস্তান্তর করতে হয়।”

তবে অতীতে একই কারণে কিছু ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ঘটনা থাকলেও, এই ঘটনায় আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি — যা নিয়ে ‘দ্বৈত নীতি’ প্রশ্নে সমালোচনা উঠছে।

ধর্মীয় স্থাপনা উচ্ছেদ ইস্যু নিয়েও প্রশ্ন

একই ব্রিফিংয়ে ঢাকার খিলক্ষেতে একটি হিন্দু মণ্ডপ উচ্ছেদ নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। মার্কিন মুখপাত্র এই প্রশ্নেও সরাসরি মন্তব্য না করে বলেন, “এটা স্থানীয় প্রশাসনিক ইস্যু। আমরা ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা ও সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্বাসী।”

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনাটি একটি অনুমতি ছাড়া তৈরি মণ্ডপ ছিল, যেটি সরকারি জায়গায় নির্মিত হয়েছিল এবং একাধিকবার নোটিশ দেওয়ার পর উচ্ছেদ করা হয়।

আন্তর্জাতিকভাবে কী বার্তা গেল?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মার্কিন প্রেস ব্রিফিংয়ে সরাসরি প্রশ্ন উঠা মানে হলো — ঘটনাটি কেবল স্থানীয় বা অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে নয়, বৈশ্বিক পর্যায়ে গুরুত্ব পাচ্ছে।

একজন কূটনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “এই ধরনের ঘটনাগুলো খুব সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করা দরকার। কারণ আন্তর্জাতিক ফোরামে এসব প্রশ্ন দেশকে বিব্রত করে, কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।”

শেষ কথা

আসিফ মাহমুদের ঘটনাটি নিছক একটি ‘ভুল’ হলেও তা কূটনৈতিক, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা ইস্যুতে জটিলতা তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে বিমানবন্দর নিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও সমভাবে নিয়ম প্রয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে।

এম আর এম – ০২৫৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button