ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও আর্থিক বিবেচনায় ধূমপান না করে খেতে পারেন কলা

ধূমপান শুধু ব্যক্তির স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকর নয়, এটি ধীরে ধীরে তার মানসিক স্থিতি এবং আর্থিক সচ্ছলতাও নষ্ট করে দেয়। অথচ ধূমপানের বিকল্প হিসেবে হাতের কাছেই রয়েছে এমন এক সহজলভ্য ফল, যা হতে পারে চমৎকার বিকল্প—কলা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলার উপকারিতা শুধু পুষ্টিগুণে সীমাবদ্ধ নয়, এটি ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়ায়ও সহায়ক হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কেন কলা হতে পারে আপনার সিগারেট ছাড়ার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী বন্ধু।

ধূমপান ও স্বাস্থ্যঝুঁকি: বাস্তব পরিসংখ্যান

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশেও এই সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ধূমপান থেকে হৃদরোগ, ফুসফুস ক্যানসার, স্ট্রোক, হাঁপানি, হাইপারটেনশনসহ নানা প্রাণঘাতী রোগের জন্ম হয়।

স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়াও ধূমপান মানসিক চাপ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া ও ঘুমের সমস্যার মতো মানসিক সমস্যাও সৃষ্টি করে। বিশেষ করে ধূমপান ছাড়ার পর দেখা দেয় নিকোটিন উইথড্রয়াল সিনড্রোম—যা সামাল দিতে অনেকেই আবার ধূমপানের পথে ফিরে যান।

কলা কীভাবে সহায়তা করে ধূমপান ছাড়তে?

কলায় রয়েছে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফাইবার—যা শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নিঃসরণ বাড়ায়। সেরোটোনিন হরমোন আমাদের মানসিক প্রশান্তি দেয়, উদ্বেগ কমায়। ধূমপান ছাড়ার সময় মানসিক চাপ ও খিটখিটে মেজাজ কমাতে এটি বিশেষভাবে কার্যকর।

২০১৮ সালে ‘জার্নাল অফ নিউরোসাইন্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্য থেকে প্রাপ্ত ট্রিপটোফ্যান সেরোটোনিন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। কলায় এই ট্রিপটোফ্যানের উপস্থিতি ধূমপানের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

নিকোটিন ছাড়ার উপসর্গ কমায় কলা

ধূমপান ছাড়ার পর শরীরে যখন নিকোটিনের ঘাটতি তৈরি হয়, তখন অনেকেই অস্থিরতা, মাথা ঘোরা, ক্ষুধামান্দ্য বা বদহজমের মতো উপসর্গে ভোগেন। কলার প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ) দ্রুত শক্তি জোগায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়া, কলায় থাকা ফাইবার হজমে সহায়ক এবং বদহজমজনিত অস্বস্তি দূর করে। ফলে ধূমপান ছাড়ার পর যে শারীরিক অস্বস্তি তৈরি হয়, তা অনেকাংশে হ্রাস পায়।

মুখের অভ্যাসে বিকল্প: কলার ভূমিকা

ধূমপান অনেক সময় শুধু নিকোটিন নির্ভরতা নয়, বরং মুখ ও হাতের একটি অভ্যাস। এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে মুখে চিবিয়ে খাওয়ার কিছু থাকা দরকার—এক্ষেত্রে কলা হতে পারে এক চমৎকার বিকল্প।

২০০৭ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, যারা ধূমপান ছাড়ার সময় ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করেন, তারা নিকোটিনের ওপর নির্ভরতা দ্রুত কমাতে সক্ষম হন। মুখে কিছু চিবানোর মাধ্যমে ধূমপানের আকর্ষণ অনেকটাই কমে আসে।

আর্থিক দিক থেকেও সাশ্রয়ী বিকল্প

প্রতিদিন যদি কেউ গড়ে পাঁচটি সিগারেট খায়, তাহলে মাসে তার খরচ হয় প্রায় ৩০০০ টাকা। অন্যদিকে প্রতিদিন একটি করে কলা খেলেও মাসে খরচ হয় ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা।

অর্থাৎ, কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, অন্যদিকে তেমনি অর্থ সাশ্রয় হবে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এটি হতে পারে অর্থনৈতিকভাবে টেকসই অভ্যাস।

ফলমূলের নিয়মিত গ্রহণ ও ধূমপান প্রবণতা

হার্ভার্ড পাবলিক হেলথ স্কুলের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা নিয়মিত ফল খান, তাদের মধ্যে ধূমপান শুরু করার প্রবণতা প্রায় ২৫% কম থাকে। ফল খাওয়ার অভ্যাস শুধুই শরীরের জন্য ভালো নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদে ধূমপান থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করে।

কলা হতে পারে প্রথম ধাপ

বিশেষজ্ঞদের মতে, ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়া অনেক সময় দীর্ঘ এবং কঠিন হয়। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে সহজলভ্য ও প্রাকৃতিক পন্থা অনুসরণ করাই শ্রেয়। কলা সেই অর্থে একটি নিরাপদ, কার্যকর এবং সাশ্রয়ী সমাধান হতে পারে।

সারসংক্ষেপ  

স্বাস্থ্য, মানসিক প্রশান্তি ও আর্থিক সাশ্রয়ের বিবেচনায় ধূমপান না করে কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা হতে পারে এক ইতিবাচক পরিবর্তন। এটি যেমন ধূমপান ছাড়ার পথে সহায়ক হবে, তেমনি জীবনযাত্রায় আসবে প্রশান্তি ও সচেতনতা।

প্রশ্ন হলো, আপনি আজই কি এই অভ্যাস শুরু করবেন?

এম আর এম – ০৭২৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button