অর্থনীতি

নতুন জ্বালানি তেলের দাম জুলাইয়ে অপরিবর্তিত ঘোষণা

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় রোববার (২৯ জুন) জানিয়েছে, জুলাই মাসে দেশের জ্বালানি তেলের দাম আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থাৎ, জুন মাসের মতো আগামী মাসেও ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম একই মাত্রায় বজায় থাকবে।

জুলাই মাসের জ্বালানি তেলের দাম

  • ডিজেল: প্রতি লিটার ১০২ টাকা
  • পেট্রোল: প্রতি লিটার ১১৮ টাকা
  • অকটেন: প্রতি লিটার ১২২ টাকা
  • কেরোসিন: প্রতি লিটার ১১৪ টাকা

গত জুনে যেভাবে পরিবর্তন আনা হয়েছিল, সেভাবেই দাম আগের অবস্থায় রেখে দিয়েছে সরকার।

দাম পরিবর্তনের পেছনের কারণ

জ্বালানি তেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখার সিদ্ধান্ত মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম বা অস্থিতিশীলতার কারণে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের তেলের বাজারে ওঠানামার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জনগণের উপকারে দামের পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

গত জুনে ডিজেলের দাম কিছুটা কমানো হয়েছিল। ডিজেলের দাম কমে ১০৪ টাকা থেকে ১০২ টাকা করা হয়। পেট্রোলের দাম কমানো হয় ১২১ টাকা থেকে ১১৮ টাকা এবং অকটেনের দামও কমানো হয় ১২৫ টাকা থেকে ১২২ টাকা। যদিও কেরোসিনের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছিল। জুলাই মাসেও এই দাম অপরিবর্তিত থাকবে।

বাংলাদেশের জ্বালানি বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি

বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রতিদিনই বাড়ছে। শিল্প, পরিবহন ও কৃষিখাতে জ্বালানির গুরুত্ব অপরিসীম। সরকার দেশীয় বাজারে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে, যাতে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা সহজে জ্বালানি পেতে পারে।

বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কখনো কখনো অস্থির হলেও বাংলাদেশ বাজারে সরাসরি প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক কাঁচা তেলের দাম বাড়লে আমদানির খরচও বাড়ে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের দামের ওপর প্রভাব ফেলে।

তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা

সরকার নিয়মিত মূল্য নির্ধারণে বাজারের চাহিদা, আন্তর্জাতিক মূল্য, কর ও শুল্ক প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে থাকে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এই দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।

এছাড়া, সরকার ডিজেল, পেট্রোল ও অন্যান্য জ্বালানিতে শুল্ক কমিয়ে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। এতে করে সাধারণ মানুষের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়েনা। বিশেষ করে কৃষক, চালক ও ব্যবসায়ীদের জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের অবস্থা

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেশ ওঠানামা করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ওপেকের উৎপাদন নীতিমালা, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক নীতি, পরিবেশগত নীতিমালা—all these factors have contributed to price fluctuations.

তবে সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। এই কারণে বাংলাদেশ সরকার সহজভাবে দেশের বাজারেও দাম অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

দেশের সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা মূলত দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তাদের দৈনন্দিন জীবন ও ব্যবসায় বড় প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে পরিবহন খাতের সঙ্গে যুক্তরা দাম বৃদ্ধিতে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হন।

অন্যদিকে, অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে বাংলাদেশের সরকার যদি সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় দাম পরিবর্তন করে তবে দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হবে।

সামগ্রিক প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে জ্বালানি খাতে বেশ সংবেদনশীল। দেশজুড়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প, শিল্পায়ন ও পরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতি ও জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মূল্য স্থিতিশীল রাখা জরুরি।

সরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় বিকল্প জ্বালানি উৎস এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উন্নয়নে কাজ করছে। এর ফলে ভবিষ্যতে জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে দেশের বাজারে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকার নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, যাতে বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের বাজার সুস্থ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button