বিশ্ব

ইরানে গ্রেপ্তার ইসরায়েলি মোসাদের দুই গুপ্তচর

ইরানের সংবাদমাধ্যম এবং সরকারি সূত্র থেকে খবর এসেছে, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের দুই গুপ্তচরকে গ্রেপ্তার করেছে। এই দুই ব্যক্তি ইরানের আলবোর্জ প্রদেশে অবৈধ বিস্ফোরক এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরি করার সময় ধরা পড়েন। খবরটি প্রথমে প্রকাশ করে আল জাজিরা এবং পরে ইরানের আধা সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম

ইরান-ইসরায়েল: দীর্ঘদিনের ছায়াযুদ্ধ

ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যকার সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত তিক্ত এবং অশান্ত। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের রাজনৈতিক এবং সামরিক উত্তেজনার কেন্দ্রে অবস্থান করছে এই দুই দেশ। ইরান দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নানা ধরণের গোয়েন্দা ও সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। অন্যদিকে ইসরায়েলও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস বা বাধাগ্রস্ত করার জন্য গুপ্তচর এবং সন্ত্রাসী অপারেশন চালিয়ে আসছে।

মোসাদের এই দুই সদস্যের গ্রেপ্তার ইরানের পক্ষ থেকে একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে, যা ইরানের সুরক্ষা বাহিনীর সতর্কতা ও শক্তি প্রদর্শন করে।

গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট ও তার প্রভাব

তাসনিমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলবোর্জ প্রদেশে এই দুই ব্যক্তি বিস্ফোরক এবং বৈদ্যুতিক উপকরণ তৈরি করছিলেন, যা ইরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা পরমাণু কর্মসূচি লক্ষ্য করে হামলার জন্য ব্যবহার করা হত। ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ধাওয়া করে এবং অবশেষে তাদের গ্রেপ্তার করে।

ইরানের সরকার এই গ্রেপ্তারের পর মোসাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ইরানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই গ্রেপ্তারই প্রমাণ যে, ইসরায়েল ইরানের অভ্যন্তরীণ স্থাপনায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারছে না।

ইসরায়েলি মোসাদের সঙ্গে ইরানের পূর্ববর্তী সংঘর্ষ

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে গোয়েন্দা যুদ্ধ নতুন কিছু নয়। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ব্যাহত করার জন্য বহুবার মোসাদের গুপ্তচর এবং বিশেষজ্ঞদের ধরা পড়েছে, অনেককেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। ইরানের কর্তৃপক্ষের দাবী, মোসাদের সদস্যরা ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালানোর চেষ্টা করে থাকে, বিশেষ করে পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে।

২০১০ সালে ইরানের পরমাণু প্লান্টে সাইবার আক্রমণ “স্টাক্সনেট” ভাইরাসের ঘটনাও মোসাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি, ইরানের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানেও মোসাদের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে বলে ইরানের সরকার বারবার অভিযোগ করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইরান-ইসরায়েলের উত্তেজনা

গত কয়েক মাস ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমবর্ধমান। ইসরায়েল বারবার ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর উত্তরে ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় এবং মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি অস্থির হয়ে ওঠে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাত যে কোনো মুহূর্তে বড় আকার নিতে পারে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বিশাল নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি

ইরান ও ইসরায়েলের এই গুপ্তচর গ্রেপ্তারের খবর বিশ্বব্যাপী গোয়েন্দা মহল এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ এই সংকটের দিকে কড়া নজর রাখছে।

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন ধরণের কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়েছে, তারা নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিরক্ষা ও প্রতিশোধের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেবে।

বিশ্লেষকরা কী বলছেন?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মোসাদের এই দুই গুপ্তচরের গ্রেপ্তার মধ্যপ্রাচ্যের জটিল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। এটি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা সম্পূর্ণ শেষের দিকে নিয়ে যাবে।

তাদের ভাষায়, “এই ঘটনা ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধকে আরও তীব্র করবে। সম্ভাবনা রয়েছে, আগামী দিনে উভয় পক্ষই আরও প্রাতিষ্ঠানিক ও সন্ত্রাসী হামলা চালাবে।”

সাম্প্রতিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ খবর

  • ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা: সম্প্রতি তেহরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিসে হামলার খবর নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল।
  • যুক্তরাজ্যের যুদ্ধবিমান পাঠানো: মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাজ্য তাদের যুদ্ধবিমান সংখ্যা বৃদ্ধি করছে, যা উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
  • ট্রাম্পের মধ্যস্থতা: মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি হতে পারে এবং রক্তক্ষয়ী সংঘাত শেষ হতে পারে।
  • ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: ইরান বেশ কয়েকবার ইসরায়েলের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

ইরান ও ইসরায়েলের সম্পর্ক দিন দিন আরও উত্তপ্ত হচ্ছে। মোসাদের এই দুই গুপ্তচরের গ্রেপ্তার মধ্যপ্রাচ্যের জটিল পরিস্থিতির একটি অংশ মাত্র। এই সংঘর্ষের পরবর্তী অধ্যায় কেমন হবে তা সময়ই বলবে। কিন্তু স্পষ্ট যে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ধরনের গুপ্তচর কার্যক্রম এবং প্রতিহিংসামূলক হামলা।

সিংগনালবিডি ডটকম এই বিষয়ে সর্বশেষ খবর এবং বিশ্লেষণ নিয়ে নিয়মিত পাঠকদের সামনে হাজির থাকবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button