বানিজ্য

তিন মাসে ইউরোপে ৫৯৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি বাংলাদেশের

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নজরকাড়া প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। ইউরোপিয়ান পরিসংখ্যান দপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) জানায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০২৫ মেয়াদে বাংলাদেশ ইউরোপে মোট ৫৯৭ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।

এই অঙ্ক ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ১৩৪ কোটি ডলার বেশি, যেখানে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৬৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ, বছর ব্যবধানে রপ্তানিতে ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

এই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি শুধু সংখ্যাগত অগ্রগতি নয়, বরং বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে। বর্তমানে ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয়ে বড় ধরনের অবদান রাখছে।

চীনের শীর্ষস্থান এবং প্রতিযোগিতা

ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে এখনো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে চীন, যার রপ্তানি ছিল ৬৬৭ কোটি ডলার। যদিও চীনের প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশ, তা বাংলাদেশের ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে।

চীনের পরে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ পণ্য গুণগত মান, প্রতিযোগিতামূলক মূল্য এবং ক্রেতাদের আস্থার কারণে অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা তুরস্ক রপ্তানি কমেছে ৪ শতাংশ, যার পরিমাণ ২৩৬ কোটি ডলার

প্রতিযোগী দেশগুলোর পারফরম্যান্স

বাংলাদেশ ও চীনের বাইরে আরও কয়েকটি দেশ ইউরোপীয় বাজারে স্থিতিশীল পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।

  • ভারত,
  • ভিয়েতনাম,
  • কম্বোডিয়া – এসব দেশগুলোও রপ্তানিতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে।

তবে এসব দেশ এখনও বাংলাদেশ বা চীনের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি, বিশেষ করে বাংলাদেশ যেভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও নিজের অবস্থান শক্ত করে রেখেছে, তা অনুকরণীয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট আমদানি চিত্র

২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ২ হাজার ৪৬৫ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এই সময়ের মধ্যে মোট আমদানিতে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যা বৈশ্বিক পোশাক বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।

বাংলাদেশ এই চাহিদার বিপরীতে নিজেদের উৎপাদন ও সরবরাহ চেইন সঠিকভাবে পরিচালনা করে সফলভাবে পণ্য সরবরাহ করেছে।

বিজিএমইএ’র বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া

বিজিএমইএ বলছে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে—

  • ক্রমাগত উৎপাদন দক্ষতা,
  • আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি,
  • পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই শিল্পনীতির বাস্তবায়ন,
  • এবং শ্রমিক-কেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এখন শুধু উৎপাদনের পরিমাণে নয়, বরং টেকসইতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার দিক থেকেও বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

যদিও রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক, তবে বিজিএমইএ বলছে— ভবিষ্যতে এই ধারা ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন হবে:

  • আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্তি,
  • আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ,
  • শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন,
  • এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী মাসগুলোতে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে আরও গতিশীল, উদ্ভাবনী এবং বাজারমুখী হতে হবে।

উপসংহার

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। ইউরোপীয় বাজারে ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন নিঃসন্দেহে দেশের রপ্তানি খাতের জন্য একটি বড় অর্জন। তবে এই ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে সরকার, উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক—তিন পক্ষেরই সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

পোশাক শিল্পের এই উত্থান যদি যথাযথ পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় পরিচালিত হয়, তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি আগামীতেও বিশ্ববাজারে আরও শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button