৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৪২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক

জুলাই মাসের প্রথম ছয় দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহে ১৫.৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। ঈদ-পরবর্তী সময়ে হুন্ডি প্রতিরোধ, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রণোদনা এবং মধ্যপ্রাচ্যে কর্মসংস্থান স্থিতিশীল থাকায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।
রেমিট্যান্স প্রবাহের বিস্তারিত বিশ্লেষণ
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত প্রবাসীরা দেশে মোট ৪২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। শুধু ৩ থেকে ৬ জুলাইয়ের মধ্যেই এসেছে ২২২ মিলিয়ন ডলার। এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে চলতি মাসের শেষে রেমিট্যান্স প্রবাহ নতুন রেকর্ড ছুঁতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০২৪ সালের একই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৭১ মিলিয়ন ডলার। তার মানে, এবার ছয় দিনের ব্যবধানে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন ডলার বেশি এসেছে।
কেন এ প্রবৃদ্ধি?
বিশ্লেষকরা বলছেন, হুন্ডি চক্র নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর নজরদারি ও আইনি পদক্ষেপের কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন। এছাড়া, ব্যাংকিং চ্যানেলে ২.৫ শতাংশ সরকারি প্রণোদনা এবং কিছু ব্যাংকের নিজস্ব ক্যাশব্যাক অফারও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নতুন কর্মী যাত্রার পাশাপাশি পুরনো অভিবাসীরাও অর্থ পাঠাচ্ছেন বেশি।
অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব
রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের রিজার্ভ চাপে থাকায় এই ধরনের রেমিট্যান্স প্রবাহ স্বস্তির বার্তা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, “ঈদের পর সাধারণত রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমে যায়। কিন্তু এবার এর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। বৈধপথে প্রবাসীরা আগ্রহের সাথে অর্থ পাঠাচ্ছেন, যা বৈদেশিক রিজার্ভকে আরও স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে।”
পরিসংখ্যান ও তুলনামূলক চিত্র
২০২৪-২৫ অর্থবছরের পুরো সময়জুড়ে রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লম্ফন লক্ষ্য করা গেছে। মোট পাঠানো রেমিট্যান্স ছিল ৩০.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার — যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ।
এই অংকটি পূর্ববর্তী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় প্রায় ২৬.৮০ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ, বৈদেশিক আয় ও অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় প্রবাসীদের অবদান ক্রমেই বাড়ছে।
বিশ্লেষকদের মতামত
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন জানান, “রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় শুধু রিজার্ভ নয়, দেশের সামগ্রিক বৈদেশিক ব্যালেন্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে এই ধারা বজায় রাখতে হলে হুন্ডি প্রতিরোধে আরও কড়া পদক্ষেপ এবং রেমিট্যান্স প্রেরকদের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা আরও সহজ করতে হবে।”
এছাড়া তিনি আরও যোগ করেন, “এ ধরনের প্রবৃদ্ধি প্রমাণ করে, সঠিক নীতিমালা থাকলে প্রবাসীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হন।”
“বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার বাড়ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় সুখবর।” — বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যমতে, চলতি জুলাই মাসের প্রথম ছয় দিনে (১ জুলাই থেকে ৬ জুলাই) দেশে মোট ৪২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫.৩৪ শতাংশ বেশি। এই প্রবৃদ্ধিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন ‘সতর্ক ইতিবাচক গতি’।
রেমিট্যান্স প্রবাহে এই গতি নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ডলারের বাজারে চাপ কমবে, রিজার্ভ বাড়বে, এমনকি টাকার মানও কিছুটা স্থিতিশীল হবে।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে—এই গতি কতদিন পর্যন্ত টিকবে? পরিস্থিতির উন্নয়ন নির্ভর করবে সরকারের ভবিষ্যৎ নীতিমালা ও প্রবাসীদের ব্যাংকিং সেবার ওপর।
এম আর এম – ০২১০, Signalbd.com