বিশ্ব

মদিনাকে ‘স্বাস্থ্যকর শহর’ হিসেবে স্বীকৃতি দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সৌদি আরবের মদিনা শহরকে ২০২৫ সালে পুনরায় ‘স্বাস্থ্যকর শহর’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম এই নগরী ইতোমধ্যে একাধিক মানদণ্ড পূরণ করে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবান্ধব নগরীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।

স্বীকৃতি অনুষ্ঠানের মূল ঘটনা

সৌদি প্রেস এজেন্সির বরাতে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এক বিশেষ অনুষ্ঠানে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহাদ আল জালাজেল মদিনা অঞ্চলের গভর্নর প্রিন্স সালমান বিন সুলতানের হাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া ‘স্বাস্থ্যকর শহর’ স্বীকৃতির সনদ তুলে দেন। অনুষ্ঠানে সৌদি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই স্বীকৃতির মাধ্যমে মদিনা শহর প্রমাণ করেছে, জনগণের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি, উন্নত জীবনমান এবং আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় তারা অন্য শহরের তুলনায় অগ্রসর।

কীভাবে মদিনা পেল স্বাস্থ্যকর শহরের স্বীকৃতি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, একটি শহরকে স্বাস্থ্যকর হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হলে ৮০টিরও বেশি মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে:

  • শহরে পর্যাপ্ত পার্ক ও উন্মুক্ত বিনোদন ক্ষেত্র তৈরি
  • হাঁটার জন্য নিরাপদ রাস্তা ও পথচারীবান্ধব অবকাঠামো
  • সহজলভ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যসচেতনতা কার্যক্রম

মদিনা শহর এসব মানদণ্ড পূর্ণভাবে অর্জন করায় ডব্লিউএইচও দ্বিতীয়বারের মতো এই স্বীকৃতি প্রদান করেছে।

২০২১ সালের স্বীকৃতির ধারাবাহিকতা

এর আগে ২০২১ সালেও মদিনা শহর একই স্বীকৃতি লাভ করেছিল। তখন থেকেই শহরটিকে একটি স্বাস্থ্যবান্ধব মডেল শহরে পরিণত করার জন্য ধারাবাহিক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় সৌদি সরকার। গত চার বছরে স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো, পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনা, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শহরের মান আরও উন্নত করা হয়েছে।

সৌদি নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি

প্রিন্স সালমান এই অর্জন সম্পর্কে বলেন, “মদিনার এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে আমাদের নেতৃত্ব দেশের জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কতটা আন্তরিক। ভিশন ২০৩০-এর লক্ষ্য পূরণের পথে এটি একটি বড় পদক্ষেপ।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, মদিনার এই উন্নয়ন এখন শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, বরং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

অন্যান্য স্বাস্থ্যকর শহরের তালিকা

শুধু মদিনাই নয়, সৌদি আরবের আরও ১৪টি শহরকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: তায়েফ, তাবুক, আদ-দিরিয়াহ, উনায়জা, জালাজেল, আল-মানদাক, আল-জুমুম, রিয়াদ আল-খুবরা এবং শরুরাহ। এসব শহরও প্রয়োজনীয় মানদণ্ড পূরণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় এসেছে।

প্রভাব ও তাৎপর্য

মদিনার এই স্বীকৃতি শহরটির নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনমান উন্নত করার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করবে। পর্যটক ও হাজিদের জন্যও এই স্বীকৃতি বাড়তি আস্থা যোগাবে। বিশেষ করে মসজিদে নববীর মতো পবিত্র স্থানকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর লাখো মানুষ এই শহরে আসেন। স্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে এখন তারা আরও নিরাপদ ও আরামদায়ক অভিজ্ঞতা পাবেন।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্বাস্থ্যকর শহরের এই মর্যাদা ধরে রাখতে এবং আরও উন্নত করতে তারা অব্যাহতভাবে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করবে। পরিবেশ সংরক্ষণ, স্বাস্থ্যখাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রচারণা জোরদার করা হবে।

সারসংক্ষেপ  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই স্বীকৃতি শুধু মদিনার জন্য নয়, বরং মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি গর্বের বিষয়। এটি প্রমাণ করে, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে শহরের জীবনমান কতটা উন্নত করা সম্ভব। আগামীর দিনে এই স্বীকৃতি আরও কতগুলো শহরকে অনুপ্রাণিত করবে—সেটিই এখন দেখার বিষয়।

এম আর এম – ০৬৪৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button