আগামী সপ্তাহে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে: ট্রাম্প

গাজায় চলমান সংঘাত বন্ধে যুদ্ধবিরতির পথে আশার আলো দেখছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামাসের ইতিবাচক সাড়ায় চুক্তির সম্ভাবনা আরও জোরালো হলেও পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজায় চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি আগামী সপ্তাহেই স্বাক্ষরিত হতে পারে। শুক্রবার (৪ জুলাই) এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন। হামাস ইতোমধ্যেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ‘ইতিবাচক সাড়া’ দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
ট্রাম্পের মন্তব্য ও যুদ্ধবিরতির অগ্রগতি
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “হামাস থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে — এটা ভালো খবর। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হবে।”
তবে আলোচনার বর্তমান অগ্রগতি সম্পর্কে তাকে এখনো বিস্তারিতভাবে জানানো হয়নি বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি আরও বলেন, “এই পরিস্থিতি প্রতিদিন বদলে যেতে পারে। তবে আমাদের এখনই কিছু একটা করতে হবে গাজা নিয়ে।”
ট্রাম্পের ঘোষণায় উঠে এসেছে যে, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ইসরায়েল ও হামাস উভয়ের সম্মতি থাকলে তা ৬০ দিনের একটি প্রাথমিক সময়ের জন্য কার্যকর হবে।
আগের চুক্তি এবং ভাঙন
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের মাধ্যমে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। তবে মার্চের শেষ দিকে সেই চুক্তি ভেঙে যায়।
এরপর ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল আবারো গাজায় নৃশংস ও নির্বিচার হামলা শুরু করে। ফলস্বরূপ, গাজার অধিকাংশ অঞ্চল এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
হামাসের প্রতিক্রিয়া ও প্রস্তুতি
হামাস জানিয়েছে, তারা মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর মাধ্যমে একটি ‘ইতিবাচক জবাব’ দিয়েছে এবং নতুন আলোচনায় অংশ নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, “আমরা যুদ্ধবিরতির কাঠামো মেনে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আমাদের লক্ষ্য গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করা ও জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
হামাসের মিত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদও আলোচনায় যোগদানের পক্ষে মত দিয়েছে। তবে তারা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা চেয়েছে।
ইসরায়েলের অবস্থান ও বর্তমান পরিস্থিতি
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিভিন্ন এলাকায় এখনও অভিযান চালাচ্ছে। শুক্রবার গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগেও পরিষ্কারভাবে বলেছেন, “সব জিম্মি মুক্ত না করা পর্যন্ত এবং হামাসের সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামো ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ শেষ হবে না।”
চুক্তির সম্ভাব্য শর্ত ও কাঠামো
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির খসড়ায় যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে:
- গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশ থেকে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার
- ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি
- এই সময়ের মধ্যে জিম্মি মুক্তির আলোচনা ও বাস্তবায়ন
- একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনার সূচনা
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে এটি হতে পারে ভবিষ্যতে একটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রক্রিয়ার ভিত্তি।
আশা ও উদ্বেগের দ্বৈত বাস্তবতা
যদিও ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আশাবাদী, কিন্তু বাস্তবতা এখনও জটিল। হামাস ও ইসরায়েল—উভয়ের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস বিরাজ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “চুক্তি কার্যকর হলেও তা কতদিন স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে উভয় পক্ষের আন্তরিকতা ও বাস্তব রাজনৈতিক চাপে।”
এদিকে আন্তর্জাতিক মহল চুক্তির জন্য কাতার, মিসর এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশংসা করছে।
“এটি শেষ করতে হবে। গাজা সম্পর্কে আমাদের কিছু করতে হবে”—ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্র।
সারসংক্ষেপ
গাজায় দীর্ঘদিনের রক্তপাত বন্ধের সম্ভাবনা যতই উঁকি দিচ্ছে, বাস্তবতা বলছে – সবকিছু এখনও অনিশ্চিত। তবে ট্রাম্পের মন্তব্য এবং হামাসের ইতিবাচক সাড়া নতুন আলো জাগিয়েছে।
তবে কি গাজায় অবশেষে শান্তির সূর্য উঠবে? নাকি এটি হবে আরেকটি ভঙ্গুর চুক্তির নামমাত্র প্রচেষ্টা—সেটাই এখন সময় বলবে।
এম আর এম – ০১৬৮, Signalbd.com