ইন্দোনেশিয়ায় আইনপ্রণেতাদের ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে উত্তাল দেশ

বিক্ষোভের সূচনা: কেন ক্ষুব্ধ ইন্দোনেশিয়ার জনগণ?
ইন্দোনেশিয়ায় সম্প্রতি সংসদ সদস্যদের ভাতা এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে অসন্তোষ শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শ্রমিক, নাগরিক অধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সময়ে আইনপ্রণেতাদের জন্য ভাতা ও সুবিধা বাড়ানো জনগণের সঙ্গে প্রতারণার সমান। দেশে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও স্বাস্থ্যখাতের সংকট বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও সরকার আইনপ্রণেতাদের বিলাসী সুবিধা নিশ্চিত করছে, যা সাধারণ মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য।
সৃজনশীল প্রতিবাদ: পার্লামেন্টের সামনে ‘বনভোজন’
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) দেশটিতে সরকারি ছুটির দিন ছিল। এই সুযোগে রাজধানী জাকার্তায় পার্লামেন্ট ভবনের সামনে হাজারো শিক্ষার্থী জমায়েত হন। তারা সেখানে এক অভিনব কর্মসূচি গ্রহণ করেন, যার নাম ‘বনভোজন বিক্ষোভ’।
এই কর্মসূচির মধ্যে ছিল—
- কবিতা পাঠ
- বই পাঠ
- সৃজনশীল প্রতিবাদমূলক বক্তৃতা
- শান্তিপূর্ণ সমাবেশ
শিক্ষার্থী নেতা ভিনসেন্ট থমাস দেশটির একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন,
“আমরা চাই আমাদের প্রতিবাদ হোক শান্তিপূর্ণ ও সৃজনশীল। শুধু চিৎকার করে রাগ প্রকাশ নয়, বরং শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা আমাদের ক্ষোভ জানাচ্ছি।”
দাবি কী বিক্ষোভকারীদের?
বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি মূল দাবি উত্থাপন করেছেন—
- সংসদ সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে
- আটককৃত বিক্ষোভকারীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে
- বেসামরিক নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করতে হবে
- মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে এবং পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে
সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা
বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী—
- এ পর্যন্ত ১০ জন নিহত হয়েছে
- আহতের সংখ্যা ১ হাজারের বেশি
- দেশজুড়ে আটক করা হয়েছে ৩ হাজারের বেশি মানুষকে
নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই দমননীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর বলপ্রয়োগ করা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
জাকার্তা ও অন্যান্য শহরে পরিস্থিতি
রাজধানী জাকার্তায় নিরাপত্তা জোরদার করতে ১ হাজার ৩৭১ পুলিশ ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মধ্য জাভার সলো শহরে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে ত্রাণ বিতরণ ও বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিবাদ চালাচ্ছেন।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও আলোচনার অগ্রগতি
গত বৃহস্পতিবার ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা সংসদ সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধি ও পুলিশের আচরণের সমালোচনা করেছেন।
শিক্ষার্থীরা প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো-এর সঙ্গে বৈঠক করার দাবি জানালেও এখনো অনুমতি পাননি। রাষ্ট্রসচিব প্রসেতিও হাদি বলেছেন,
“সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি পর্যালোচনা করবে। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা হবে।”
বিক্ষোভের ইতিহাস ও সামাজিক প্রভাব
ইন্দোনেশিয়ায় এর আগে ২০১৯ সালে শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল। এবারকার আন্দোলনটি তার চেয়েও বড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এতে শুধু শিক্ষার্থী নয়, বরং সাধারণ জনগণ ও নাগরিক সংগঠনগুলোও সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিক্ষোভ দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। প্রেসিডেন্ট যদি দ্রুত সমাধান না করেন, তবে আন্দোলন আরও বিস্তৃত আকার ধারণ করবে।
জনগণের অনুভূতি ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা
সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগ #ReformasiDikorupsi, #TolakKenaikanTunjangan এবং #SaveDemocracyIndonesia ট্রেন্ড করছে। শিক্ষার্থীরা ফেসবুক, টুইটার ও টিকটকে লাইভ ভিডিও, কবিতা ও ব্যঙ্গাত্মক কনটেন্ট শেয়ার করছেন। এতে সাধারণ মানুষের সমর্থন আরও বাড়ছে।
এই বিক্ষোভের ভবিষ্যৎ কী?
বিক্ষোভ কতদিন চলবে তা নির্ভর করছে সরকারের প্রতিক্রিয়ার ওপর। যদি সরকার ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতা অব্যাহত থাকে, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট সুবিয়ান্তোর জনপ্রিয়তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। কারণ, জনগণের চোখে সরকার এখন দুর্নীতিপরায়ণ এবং অসংবেদনশীল হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে।
MAH – 12649, Signalbd.com