৪৭ দিনের ক্যাম্পে মাত্র ১০-১২ দিন মাঠে, হতাশ ক্রিকেটাররা

বাংলাদেশ ক্রিকেটের তরুণ ও সম্ভাবনাময় ক্রিকেটাররা জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু ৪৭ দিনের ক্যাম্পে মাঠে অনুশীলনের সময় পাওয়া গেছে মাত্র ১০ থেকে ১২ দিনই। মূলত বৃষ্টির অবিরাম তাণ্ডব এবং অনুকূলে না থাকা আবহাওয়া তাদের প্রশিক্ষণে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে চলমান এইচপি (হাই পারফরম্যান্স) এবং ‘এ’ দলের ক্যাম্পে প্রায় ৪০ জন ক্রিকেটার অংশগ্রহণ করছেন। ১০ জুন থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পে দীর্ঘ সময় ধরে অনুশীলনের পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবতায় তা যথেষ্ট হয়নি। অধিকাংশ সময়ই ইনডোর অনুশীলনেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। তবে ইনডোরের মাঠেও টার্ফ বসানোর কাজ চলায় সেখানে অনুশীলনের বিরতি দিতে হয়েছে।
বৃষ্টির বাধায় প্রস্তুতিতে বিঘ্ন
চট্টগ্রামের পরিবর্তনশীল আবহাওয়া ক্রিকেটারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এটি জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ, এই সময়টি তরুণ ক্রিকেটারদের স্কিল উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
একাধিক ক্রিকেটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তারা বৃষ্টির কারণে অনেক দিন মাঠে অনুশীলন করতে পারেননি। তাদের মতে, প্রস্তুতির জন্য এটি বড় সুযোগ, কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি।
এইচপির ম্যানেজার ও কোচের বক্তব্য
হাই পারফরম্যান্স দলের ম্যানেজার জুনায়েদ চৌধুরী জানান, তারা প্রায় ২৪ থেকে ২৫ দিন মাঠে অনুশীলন করেছেন। তবে ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা ও ম্যানেজারের বক্তব্যে পার্থক্য থাকার বিষয়টি চোখে পড়েছে।
কোচ ডেভিড হেম্প বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে সমস্যা হয়েছে, তবে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমরা বৃষ্টির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ইনডোর ও আউটডোর উভয়ভাবে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি। বৃষ্টির মধ্যেও কিছু শেখার সুযোগ পেয়েছি।’
তিনি আরও জানান, আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামে এইচপির ক্যাম্প চলবে। এরপর ১০ দিনের বিরতি দিয়ে রাজশাহীতে দ্বিতীয় ধাপের স্কিল অনুশীলন শুরু হবে। এছাড়া ৩১ জুলাই, ১ ও ৩ আগস্ট তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে এইচপি ও ‘এ’ দল।
‘এ’ দলেরও অনুশীলনে বাধা
‘এ’ দলও প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামে রয়েছে, কিন্তু তারা ৪-৫ দিন মাঠে অনুশীলন করতে পারেনি। তরুণ ক্রিকেটারেরা মনে করছেন, বৃষ্টির কারণে অনুশীলনে বাধা পেয়ে হতাশার মুখে পড়েছেন তারা।
বৃষ্টির সময়টাকে অনেকে ‘অফ সিজন’ মনে করলেও, আসল সমস্যা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে এই সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘এ’ দল এবং তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এইচপি ক্যাম্পই তাদের গড়ে ওঠার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম।
রাজশাহীতে দ্বিতীয় ধাপের প্রস্তুতি
আগামী ২২ আগস্ট থেকে রাজশাহীতে শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের ক্যাম্প, যেখানে ১০ দিন কঠোর স্কিল ও ফিটনেস অনুশীলন থাকবে। এনসিএল টি-টোয়েন্টির আগে এই সময়টি ক্রিকেটারদের জন্য সোনার সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এখানে বৃষ্টি ও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে অবশ্য সংশয় আছে, তাই খেলোয়াড় ও কোচরা বিশেষ পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।
কেন এত বেশি বৃষ্টি?
চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে জুলাই-আগস্ট মাসে বর্ষাকাল চলছে, যা সাধারণত ভারী বৃষ্টিপাত ও কখনো কখনো প্রবল ঝড়ের কারণ হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এই ধরনের প্রাকৃতিক ব্যাঘাত আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাধারণত এই সময়টি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অফ-সিজন হিসেবে দেখা হয়, তবে তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে তাদের দক্ষতা বিকাশে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
ক্রিকেটারদের হতাশা ও ভবিষ্যৎ চিন্তা
অনেক ক্রিকেটারই মনে করছেন, দীর্ঘদিন ক্যাম্পে থাকার পর মাঠে অনুশীলন না পাওয়ায় তাদের ফিটনেস ও মানসিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দলের এক তরুণ ক্রিকেটার বললেন, “আমরা প্রস্তুতি নিতে চাচ্ছি, কিন্তু বৃষ্টি আমাদের বারবার বাধা দিচ্ছে। এভাবে যেতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ সংকটে পড়বে।”
তারা আশা করেন, দ্রুত বৃষ্টির অবস্থা ভালো হবে এবং মাঠে ফিরে অনুশীলন শুরু করতে পারবেন। কারণ অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে প্রস্তুতি না হলে বড় প্রতিযোগিতায় ভালো করার সুযোগ কমে যাবে।
বিসিবির পরিকল্পনা ও উদ্যোগ
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) টানা বৃষ্টির কারণে অনুশীলনে বিঘ্ন আসায় বিকল্প পরিকল্পনা নিচ্ছে। ইনডোর সুবিধা উন্নত করতে দ্রুত টার্ফ বসানোর কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ফিটনেস ও স্কিল উন্নয়নের জন্য নতুন নতুন প্রশিক্ষণ পদ্ধতি আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী ও উচ্চপদস্থরা অনুশীলনের জন্য আবহাওয়ার ওপর নজর রাখছেন এবং ক্রিকেটারদের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ভবিষ্যৎ জন্য করণীয়
১. আবহাওয়া বিবেচনায় নতুন পরিকল্পনা: বৃষ্টির সময়টাকে মাথায় রেখে ইনডোর প্রশিক্ষণের পরিধি বাড়ানো জরুরি।
২. আধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ব্যবহার: ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ও সিমুলেটর ব্যবহার করে মাঠের অভিজ্ঞতা অর্জনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
৩. পরিবেশবান্ধব ও উন্নত ইনডোর মাঠ নির্মাণ: দ্রুত সময়ের মধ্যে ইনডোর টার্ফ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উন্নত করা দরকার।
৪. মানসিক প্রশিক্ষণ ও থেরাপি: হতাশা কমাতে বিশেষ মনোবৈজ্ঞানিক সহায়তা দেওয়া যেতে পারে।
৫. আন্তর্জাতিক পরামর্শ ও কোচিং: অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক কোচদের মাধ্যমে আরও প্রফেশনাল গাইডলাইন দেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ভবিষ্যতের মঞ্চ প্রস্তুত করার এই কঠিন সময়ে আবহাওয়া ও অনুশীলনের সীমাবদ্ধতা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সমস্যা থাকলেও ইতিবাচক মনোভাব ও আধুনিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।
তরুণ ক্রিকেটাররা আশা করছেন শীঘ্রই মাঠে ফিরে পুরোপুরি অনুশীলন করতে পারবেন এবং দেশের জন্য সুদূরপ্রসারী অবদান রাখবেন। বৃষ্টির গন্ডগোল কাটিয়ে যখন তারা মাঠে দাপিয়ে বেড়াবে, তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্ব মঞ্চে আরও শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে বলে মনে করা হয়।
MAH – 12030, Signalbd.com