বাংলাদেশ

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ৩৪৩

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩৪৩ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি।

নতুন আক্রান্তদের বিভাগভিত্তিক সংখ্যা

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন আক্রান্ত ৩৪৩ জনের মধ্যে রাজধানী ঢাকা ও এর বাইরের বিভিন্ন এলাকায় রোগীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫১ জন, ঢাকা বিভাগের গ্রামীণ এলাকায় ৫৪ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৬৪ জন, দক্ষিণ সিটিতে ৫৯ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বাইরে ৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, বর্তমানে সারাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বিস্তার লাভ করছে, বিশেষ করে নগর এলাকায়।

জানুয়ারি থেকে মোট আক্রান্তের পরিসংখ্যান

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট ২১ হাজার ৬৭০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮৪ জনের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, আর এ বছরও একই ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ডেঙ্গুর পূর্বের পরিস্থিতি ও তুলনা

গত বছর একই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও এবার শুরু থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ডেঙ্গুর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

ডেঙ্গুর লক্ষণ ও চিকিৎসার নির্দেশনা

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর প্রথম লক্ষণ হিসেবে উচ্চমাত্রার জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে লাল দাগ, বমি ভাব এবং শরীর ব্যথা দেখা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সাধারণ জনগণকে নির্দেশ দিয়েছে, জ্বর দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করাতে। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে ডেঙ্গুতে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

জনসচেতনতার গুরুত্ব

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মশার প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট করতে হবে। জমে থাকা পানি, পুরনো টায়ার, ফেলে রাখা বোতল বা পাত্রে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনও নিয়মিতভাবে মশা নিধন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সতর্কতা

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। তাই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রোধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “জ্বর দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত হাসপাতালে যান। ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলে ঘরে বসে না থেকে সঠিক চিকিৎসা নিন।”

ভবিষ্যৎ করণীয়

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টির মৌসুম জুড়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নগর ও গ্রামীণ উভয় এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, ব্যক্তিগত সতর্কতা গ্রহণ এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া — এই তিনটি বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

সংক্ষেপে বলা যায়, প্রতিদিন বাড়তে থাকা ডেঙ্গুর সংক্রমণ দেশের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যদি সচেতন হয় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়, তবেই এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

এম আর এম – ০৬৬৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button