সিঙ্গার বাংলাদেশ ও বুয়েটের যুগান্তকারী চুক্তি স্বাক্ষর

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড এবং দেশের প্রখ্যাত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তি শিল্প ও একাডেমিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ, জ্ঞান বিনিময়, ইন্টার্নশিপ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের বিশদ বিবরণ
সাম্প্রতিক বুয়েট উপাচার্যের দপ্তরে অনুষ্ঠিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম বদরুজ্জামান এবং সিঙ্গার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম এইচ এম ফাইরোজ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক এ হাসিব চৌধুরী, রিসার্চ অ্যান্ড ইনভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম, সিঙ্গার বাংলাদেশের মানবসম্পদ পরিচালক সৈয়দ জাহিদুল ইসলাম, কারখানা পরিচালক হাকান অলতিনিসিক এবং উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
এই সমঝোতা চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো:
- গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পে যৌথ উদ্যোগ: নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী পদ্ধতি বিকাশে একসাথে কাজ করা।
- জ্ঞান বিনিময় ও কর্মশালা: ছাত্র ও শিক্ষকদের মাঝে আধুনিক দক্ষতা ও তথ্য বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করা।
- ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম: বুয়েটের শিক্ষার্থীদের সিঙ্গার বাংলাদেশ সহ শিল্পখাতে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ দেয়া।
- চাকরির বিজ্ঞপ্তি ও রেফারেল: ছাত্রদের জন্য সরাসরি চাকরির সুযোগ ও রেফারেল সেবা প্রদান।
- চাকরি মেলা আয়োজন: নিয়মিত কর্মসংস্থান মেলা করে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন চাকরির বাজার তৈরি করা।
শিল্প ও শিক্ষার সমন্বয়ে ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান
বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম বদরুজ্জামান বলেন, “শিল্প ও একাডেমিয়ার মধ্যে সমন্বয় হলো দেশের উন্নয়নের অন্যতম মূল চাবিকাঠি। সিঙ্গার বাংলাদেশের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে এই চুক্তি আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়াতে এবং দেশের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনে সহায়ক হবে।”
সিঙ্গার বাংলাদেশের এমডি ও সিইও এম এইচ এম ফাইরোজ বলেন, “আমরা বুয়েটের মতো প্রগতিশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জোট বাঁধার মাধ্যমে নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবনী প্রকল্প বাস্তবায়ন করব। পাশাপাশি, এই অংশীদারিত্ব দেশের যুব সমাজকে দক্ষ পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
সিঙ্গার বাংলাদেশ: দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান
সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে দেশের গৃহস্থালি ও ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারে নেতৃত্ব দেয়। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত এবং এর শেয়ারের বাজার মূল্য নিয়মিত ভালোভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএসইতে সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ার প্রতি ১১৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে এবং প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
প্রযুক্তি ও শিক্ষার মেলবন্ধনে নতুন সম্ভাবনা
বিশ্বব্যাপী শিল্প ও শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশও এই গতিধারা থেকে পিছিয়ে নেই। বুয়েটের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশীদারিত্ব প্রযুক্তিগত গবেষণা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং নতুন পেশাজীবী তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
এই চুক্তির মাধ্যমে:
- উচ্চশিক্ষার্থীদের হাতে আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পৌঁছানো সম্ভব হবে।
- গবেষণায় নতুন দিকনির্দেশনা ও অর্থায়ন সৃষ্টি হবে।
- কর্মসংস্থানে সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, বিশেষত প্রযুক্তি নির্ভর সেক্টরে।
দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব
শিল্প ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একত্রীকরণ শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, পুরো দেশের অর্থনীতির জন্যই লাভজনক। দক্ষ কর্মী তৈরি হলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে, নতুন ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি হয় এবং রপ্তানি খাত শক্তিশালী হয়। সিঙ্গার-বুয়েট চুক্তি এমন একটি পথ খুলে দিচ্ছে যা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সহায়ক হবে।
ভবিষ্যতে কী ধরণের উদ্যোগ আশা করা যায়?
১. প্রযুক্তি উদ্ভাবনে যৌথ গবেষণা: নতুন পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরিতে কাজ।
২. ইন্টার্নশিপ ও ট্রেনিং: শিক্ষার্থীদের হাতে বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান।
৩. কর্মশালা ও সেমিনার: দক্ষতা বৃদ্ধি ও জ্ঞানবিনিময়ের পরিবেশ সৃষ্টি।
৪. চাকরি মেলা ও নিয়োগ: শিক্ষার্থীদের জন্য সরাসরি চাকরির বাজার তৈরি।
৫. স্টার্টআপ সহযোগিতা: তরুণ উদ্যোক্তাদের নতুন উদ্যোগে সহায়তা।
সার্বিকভাবে চুক্তির গুরুত্ব
সিঙ্গার বাংলাদেশ ও বুয়েটের এই সমঝোতা চুক্তি শুধুমাত্র দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার নয়, বরং দেশের শিল্প-শিক্ষা খাতের এক নতুন যুগের সূচনা। এটি দেশের প্রযুক্তি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে এবং তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক পেশাগত দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের কর্মী হিসেবে গড়ে তুলবে।