নির্ভীক হুঁশিয়ারি ইরানে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রকে ভোগ করতে হবে কঠোর পরিণতি

ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলার প্রেক্ষিতে ইয়েমেনের প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি মার্কিন সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে। রোববার (২২ জুন) হুতি গোষ্ঠীর রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য হেজাম আল-আসাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে হামলা করে, তবে তার কঠোর ও বিধ্বংসী পরিণতি ভোগ করতে হবে।”
ইরানে হামলা: পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বিপদসঙ্কেত
হুতি গোষ্ঠীর এই হুঁশিয়ারি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সামরিক পদক্ষেপ হলে তা শুধু দু’দেশের মধ্যকার সংঘর্ষেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে তা মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
আগের দিন হুতি গোষ্ঠী জানিয়েছিল, লোহিত সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজগুলোকে তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হবে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক অভিযান শুরু করে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হচ্ছে যে, ইয়েমেনের এই গোষ্ঠী ইরানকে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে সম্পূর্ণ সমর্থন দেয় এবং যেকোনো আক্রমণের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
ফিলিস্তিনের হামাসের নিন্দা ও ইরানের প্রতি সংহতি
একই সময় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসও ইরানে মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের স্বার্থে করা এই হামলা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য গভীর সংকট ও অস্থিরতার কারণ হবে।”
হামাস আরও জানিয়েছে, ইরান একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে আসছে। তাই ইরানের প্রতি তাদের দৃঢ় সংহতি রয়েছে এবং তারা আন্তর্জাতিক মহলকে ইরানের বিরুদ্ধে কোনো অবিচারমূলক হামলার প্রতিবাদ করতে আহ্বান জানিয়েছে।
কেন ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ঝুঁকিপূর্ণ?
ইরানের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও সামরিক শক্তি বিশ্বের অনেক দেশকে সতর্ক করে রেখেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম দেশগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ইরানের কূটনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পশ্চিমা শক্তির চোখে একটি বড় ‘ঝুঁকি’ হিসেবে পরিচিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন হামলা শুরু হলে, তা ইসরানের মিত্র রাষ্ট্রগুলো ও বিভিন্ন প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে উত্তেজিত করবে, যা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
ইয়েমেন যুদ্ধ ও হুতির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী মূলত শিয়াকৈ জাতিগোষ্ঠী এবং ইরানের কাছ থেকে সমর্থন পায়। ইয়েমেনে চলমান গৃহযুদ্ধে তারা দেশের সরকার ও সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে। তাদের সামরিক শক্তি ও কৌশলগত অবস্থান লোহিত সাগরের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জন্য গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা রোধে কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হলে তা আন্তর্জাতিক মহলে একটি বিশাল সংকট তৈরি করবে, যা শুধুমাত্র সামরিক সংঘর্ষ নয়, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বহু বছর ধরে টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ইরানীয় ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক সংকটপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি ইরানের মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠীর হুঁশিয়ারি ও ফিলিস্তিনের হামাসের কঠোর নিন্দা এই সংঘাতের জটিলতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান খোঁজা, যাতে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং বিশ্ব শান্তি রক্ষা পায়।