আঞ্চলিক

গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু

গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু

গাজীপুরের নাওজোড় এলাকায় মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মুকিমপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৩৩), তার স্ত্রী আঁখি আক্তার (২৬) এবং তাদের দুই বছর বয়সী কন্যা আন্নি খাতুন।

নিহতের চাচা মেহের আলী জানান, আনোয়ার হোসেন ময়মনসিংহের আরএফএল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সকালবেলায় স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ঢাকার আশুলিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা ময়মনসিংহ থেকে গাজীপুরের দিকে অটোরিকশায় রওনা হন।

দুর্ঘটনার বিবরণ

বাসন থানার নাওজোড় এলাকায়, রিয়াজ ফিলিং স্টেশন এর উত্তরে পৌঁছালে অটোরিকশার পেছনের চাকা খুলে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারানো অটোরিকশাটি একটি কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়ায়। এই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই শিশু আন্নি খাতুন নিহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় আনোয়ার হোসেন ও আঁখি আক্তারকে উদ্ধার করে গাজীপুর সদর হাসপাতালে নেয়া হলে, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তাদের মৃত্যু ঘটে।

বাসন থানার উপপরিদর্শক সানোয়ার হোসেন জানান, দুর্ঘটনাকবলিত অটোরিকশা এবং কাভার্ডভ্যান এখন থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং দুর্ঘটনার কারণ নির্ধারণের জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। বিগত কয়েক বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাধারণত যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি, অতিরিক্ত গতি, রাস্তায় অসতর্কতা এবং নিয়মিত ট্রাফিক আইন না মানার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।

বিশেষভাবে অটোরিকশা ও ছোট যানবাহনের ক্ষেত্রে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করলে এমন দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে নিয়মিত যানবাহনের চাকা, ব্রেক, লাইট ও অন্যান্য যান্ত্রিক অংশ পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।

স্থানীয়দের বক্তব্য

স্থানীয়রা জানান, নাওজোড় এলাকায় এই ধরনের দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই রাস্তায় যানবাহনের তীব্র গতি এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের অভাব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। তারা সরকারের কাছে নিরাপদ সড়ক এবং যথাযথ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য দাবি জানিয়েছেন।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

নিহতদের পরিবার এবং গ্রামবাসীরা শোকস্তব্ধ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এলাকাবাসী এই দুর্ঘটনার জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিশেষত শিশু আন্নির অকাল মৃত্যুর জন্য সবাই মর্মাহত।

স্থানীয় প্রশাসনও এই দুর্ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সড়ক নিরাপত্তা ও সরকারী পদক্ষেপ

বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, রাস্তায় ট্রাফিক চিহ্ন স্থাপন এবং নিয়মিত নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে দুর্ঘটনা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জনগণকেও সচেতন হতে হবে। ট্রাফিক আইন মেনে চলা, দ্রুতগতিতে যানবাহন চালানো থেকে বিরত থাকা এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে শিশু ও কিশোরদের বিশেষভাবে সুরক্ষা দেওয়া জরুরি। শিশুদের নিরাপদ সড়ক ব্যবহার শেখানো, সিটবেল্ট ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলা অতি প্রয়োজনীয়।

গাজীপুরের এই দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে শোকাহত করল না, বরং পুরো এলাকায় দুঃখ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। দুর্ঘটনার মূল কারণ নির্ধারণ ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা না হলে ভবিষ্যতেও এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটতে পারে।

MAH – 12428 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button