বিশ্ব

ফের ভয়াবহ দাবানলের কবলে যুক্তরাষ্ট্র, পুড়ে ছাই ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ

 যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে ফের শুরু হয়েছে ভয়াবহ দাবানল। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে শতবর্ষী ঐতিহাসিক লজ। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের নর্থ রিম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে শত শত পর্যটক ও বাসিন্দাকে। দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে কয়েক হাজার একরজুড়ে।

দাবানলের ভয়াবহ থাবায় যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন এখন ভয়াবহ দাবানলের কবলে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে হাজার হাজার একর এলাকা দাবানলের তাণ্ডবে ছাই হয়ে গেছে। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে প্রায় একশ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক “গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ”, যা ছিল মার্কিন জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ।

প্রতিদিনই আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে চলেছে। চলমান দাবানলটির নাম ‘ড্রাগন ব্রাভো ফায়ার’, যা গত ৪ জুলাই বজ্রপাতের মাধ্যমে শুরু হয়। দাবানলের পরিধি বেড়ে গিয়ে এখন এটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাকৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থানের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঐতিহাসিক লজ পুড়ে ছাই

১৯৩৭ সালে নির্মিত গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ একসময় দর্শনার্থীদের কাছে অন্যতম প্রিয় স্থান ছিল। ইউনেস্কো স্বীকৃত এই স্থাপনাটি যুক্তরাষ্ট্র সরকার ‘জাতীয় ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখান থেকে উপভোগ করতেন গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের অনন্য সৌন্দর্য। কিন্তু এই দাবানলে ভবনটির মূল অংশসহ আশপাশের ১২০টি কেবিন একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

হাজার হাজার একর জুড়ে আগুন

গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের উত্তর প্রান্তজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ড্রাগন ব্রাভো ফায়ার দাবানলটি ইতিমধ্যে প্রায় ৫০০ একরেরও বেশি এলাকা গ্রাস করেছে। এছাড়া, এর পাশাপাশি ‘হোয়াইট সেজ ফায়ার’ নামক আরেকটি দাবানল শুরু হয়েছে ৯ জুলাই, যা ১৩ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৪০,১৮৬ একর এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

দাবানলটি ঘণ্টায় প্রায় ৩২ কিমি গতিতে এগোচ্ছে এবং দমকা হাওয়ার কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে আরও দ্রুত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নর্থ রিম বন্ধ ঘোষণা করেছে ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস। শত শত পর্যটক এবং পার্ককর্মীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

৫০০ জনের বেশি দমকলকর্মীর নিরলস চেষ্টা

প্রায় ৫০০ জন ফায়ারফাইটার বর্তমানে ‘হোয়াইট সেজ ফায়ার’ এবং ‘ড্রাগন ব্রাভো ফায়ার’ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। আকাশপথেও আগুন নিয়ন্ত্রণে রাসায়নিক স্প্রে করা হচ্ছে। যদিও দাবানলের বিস্তার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে, তবে গরম, শুষ্ক আবহাওয়া এবং প্রবল বাতাসের কারণে এখনো পুরোপুরি দমন সম্ভব হয়নি।

পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি: ক্লোরিন গ্যাসের আতঙ্ক

এই দাবানলের আরেকটি ভয়াবহ দিক হলো—একটি চিকিৎসা বর্জ্য প্ল্যান্টে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় ক্লোরিন গ্যাস ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালাপোড়া এমনকি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারানোর মত ঘটনাও ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগ।

এই কারণে আশপাশের এলাকাগুলোতে উচ্চমাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং স্থানীয় নাগরিকদের মাস্ক ব্যবহার ও বাড়ির বাইরে কম বের হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রকৃতির বার্তা নাকি অন্য কোনো ইঙ্গিত?

সামাজিক মাধ্যমে দাবানল নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। অনেকেই বলছেন, এটি যেন প্রকৃতির প্রতিশোধ। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং চলমান ফিলিস্তিন সংকটকে সামনে রেখে নেটিজেনদের অনেকেই এই দাবানলকে আল্লাহর গজব বলেও মন্তব্য করছেন।

অনেকে বলছেন, যারা অন্যায়ভাবে নিরীহ মানুষের ওপর আগ্রাসন চালায় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, প্রকৃতি এক সময় তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। এই দাবানল যেন তারই নিদর্শন।

ভবিষ্যতের শঙ্কা ও করণীয়

বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও পরিবেশের ভারসাম্য হারানোর কারণে দাবানলের পরিমাণ ও তীব্রতা বাড়ছে। যদি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে সামনে আরও ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে মানবজাতি।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার যদিও দাবানল মোকাবেলায় সক্রিয় রয়েছে, তবে এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

“এই দাবানল শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের সতর্ক সংকেত” — পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. লুইস ব্রাউন

সারসংক্ষেপ  

গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ দাবানল শুধুই একটি স্থানীয় দুর্যোগ নয়; এটি বিশ্বজুড়ে একটি বড় বার্তা বহন করে। পরিবেশের প্রতি অবহেলা, রাজনৈতিক হিংসা ও যুদ্ধ যখন বাড়তে থাকে, তখন প্রকৃতিও যেন তার প্রতিবাদ জানায়। এখন সময় সচেতন হওয়ার, নাহলে এর চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে।

এম আর এম – ০৩৩৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button