বানিজ্য

ঈদুল আজহা সামনে রেখে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দামে স্বস্তি

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশে মসলাজাতীয় পণ্যের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে ক্রেতার সংখ্যা আশানুরূপ নয়। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, চাক্তাইসহ দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার মতো প্রধান মসলাজাতীয় পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম। তবে স্বস্তিদায়ক এ দামেও এখনও জমে ওঠেনি ঈদ-পূর্ব মসলার বাজার।

সরবরাহ বেশি, চাহিদা কম: দাম পড়তির দিকে

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিবছর মসলার বাজারে ব্যাপক সরবতা দেখা গেলেও এবার চিত্র ভিন্ন। চাহিদার তুলনায় পণ্য সরবরাহ বেশি থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি নগণ্য।

চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান খালেদ বলেন, “বাজারে পণ্য রয়েছে পর্যাপ্ত। কিন্তু বেচাকেনা নেই। ফলে দাম কমে গেছে। কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি থাকলেও এখনো আমরা প্রত্যাশিত বিক্রি পাইনি।”

পাইকারি পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বাজারে সরবরাহের চিত্র দেখে মনে হচ্ছে, দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ভালো হয়েছে এবং আমদানি নির্ভরতা কমেছে। ফলে দাম কমলেও ব্যবসা তেমন জমে ওঠেনি।

দেশি পেঁয়াজের দাপট, আমদানি প্রায় বন্ধ

খাতুনগঞ্জ ও হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন প্রায় পুরোপুরি দেশি পেঁয়াজের আধিপত্য। আগে যেখানে ভারত, চীন, পাকিস্তান বা মিসর থেকে আসা আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি থাকত, সেখানে গত এক মাসে দৃশ্যপট পাল্টেছে।

হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, “দেশি পেঁয়াজ ভালো এসেছে। গুণগত মানও ভালো। তাই আমদানির প্রয়োজন হয়নি। ভারতীয় পেঁয়াজ গুটিকয় দোকানে পাওয়া গেলেও তা খুব সীমিত।”

বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকায়। গত বছর একই সময়ে দাম ছিল ৬০ টাকা বা তার বেশি। ব্যবসায়ীদের ধারণা, ঈদের দিন ঘনিয়ে এলে চাহিদা বাড়লে দাম কিছুটা বাড়তে পারে।

হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, “চাহিদা নেই বললেই চলে। সরবরাহ প্রচুর, ফলে দামও পড়ে গেছে। পেঁয়াজের বাজারে স্থিতিশীলতা এখনো আছে, তবে শেষ সময়ে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।”

আদা ও রসুনের বাজারেও ইতিবাচক গতি

পেঁয়াজের মতো আদা ও রসুনের বাজারেও এবার রয়েছে স্বস্তি। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় দুই পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। খাতুনগঞ্জ ও আশপাশের পাইকারি বাজারগুলোতে দেখা গেছে, রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। এর মধ্যে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার আশপাশে, আর চীনা রসুন ১৩০ টাকায়।

অন্যদিকে, আদার দামে সবচেয়ে বড় পতন ঘটেছে। গত বছর কোরবানির আগে প্রতি কেজি আদার দাম ছিল ১৮০ টাকারও বেশি। এবার চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে, ভারতীয় আদা ৮৫ থেকে ৯০ টাকা এবং দেশি আদা পাওয়া যাচ্ছে ৯০ টাকায়। অর্থাৎ দাম কমেছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত।

চাক্তাইয়ের এক আড়তদার বলেন, “চীনা ও ভারতীয় আদার পাশাপাশি এবার দেশি আদাও বাজারে ভালোভাবে এসেছে। সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তবে পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় বিক্রি আশানুরূপ নয়।”

খুচরা বাজারেও দামের পার্থক্য কম, কিন্তু ক্রেতা নেই

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট, চকবাজার, আগ্রাবাদ, আমিন জুট এলাকার খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ, আদা ও রসুন বিক্রি হচ্ছে পাইকারি দরের চেয়ে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা বেশি দামে।

বহদ্দারহাট বাজারের এক মুদিদোকানি মোহাম্মদ ফরিদুল হক বলেন, “বাজারে এখনো ক্রেতা কম। মাসের শুরু মাত্র হয়েছে, অনেকেই হয়তো এখনও ঈদের বাজারে নামেননি। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ভিড় বাড়বে বলে আশা করছি।”

ঈদের আগে বাজার কীভাবে প্রভাবিত হতে পারে?

বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীদের মতে, কোরবানির ঈদের আগের পাঁচ দিনেই মূলত মসলাজাতীয় পণ্যের বাজার সবচেয়ে বেশি চাঙা হয়। কারণ তখন বাড়িতে কোরবানির প্রস্তুতি শুরু হয় পুরোদমে। ফলে চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে গেলে কিছুটা দাম বাড়তে পারে।

তবে চলতি বছরের প্রবণতা দেখে বলা যায়, বাজারে পণ্যের জোগান যদি এমনই থাকে এবং ক্রেতার ভিড় না বাড়ে, তবে বড় ধরনের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা নেই।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের একজন পরিচালক বলেন, “বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই, সরবরাহ ভালো, আমদানিও কম। ফলে দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এটা ভোক্তার জন্য সুখবর।”

চট্টগ্রামসহ দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজারগুলোতে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম বর্তমানে ক্রেতা-সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা এখনও আশানুরূপ বিক্রি করতে পারেননি। মূলত সরবরাহ বেশি ও চাহিদা কম থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি কম হওয়ায় কিছুটা হতাশ ব্যবসায়ীরা।

আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আগামী কয়েক দিনেই বাজার জমে ওঠার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে সরকার এবং ভোক্তাসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো বাজার পরিস্থিতির ওপর নজরদারি অব্যাহত রাখলে দাম স্থিতিশীল থাকায় নিশ্চিত করা যাবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button