বিশ্ব

পাকিস্তানে করাচিতে বহুতল ভবন ধসে মৃত্যু ১২, ধ্বংসস্তূপে আটকা বহু মানুষ

পাকিস্তানের করাচি শহরের ঐতিহাসিক লি মার্কেট এলাকায় ভয়াবহ একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১২ জন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ধারণা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন। শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতের দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। খবর নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম জিও নিউজ।

কীভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা?

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, করাচির দক্ষিণাঞ্চলীয় লিয়ারি এলাকার লি মার্কেটের পাশে অবস্থিত পাঁচতলা ভবনটির দুটি পিলার শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে প্রথমে ধসে পড়ে। এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানে পুরো ভবনটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে। মুহূর্তেই বিল্ডিংটি ধুলার স্তূপে পরিণত হয়।

ভবনটির কাঠামো অনেকদিন ধরেই দুর্বল ছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বেশ কিছুদিন আগে ভবনটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করেছিল করাচি সিটি করপোরেশন (KMC)। তবুও সেখানে প্রায় ১০০ জনের বেশি বাসিন্দা থাকতেন। বিশেষ করে নিম্নআয়ের পরিবারগুলোর কাছে এটি ছিল একমাত্র আশ্রয়স্থল।

সম্প্রতি বৃষ্টিপাত ছিল বিপদের পূর্বাভাস

করাচিতে গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত হওয়ায় বহু ভবনের কাঠামোগত দুর্বলতা বাড়তে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও পানি জমে থাকা দুর্বল ভবনগুলোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ধসে পড়া ভবনটিও সম্প্রতি ভারি বৃষ্টির ফলে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

নিহত ও আহতদের পরিচয়

ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে সিন্ধু প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ। আহতের সংখ্যা এখনও নির্দিষ্ট করে বলা যায়নি, তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন—অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।

ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বেশ কয়েকজন আটকে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, ধ্বংসস্তূপের ভেতরে জীবনের অস্তিত্বের সংকেত পাওয়া গেছে, কিন্তু সময় যতই যাচ্ছে, তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা কমে আসছে।

উদ্ধার কার্যক্রম চলছে

ঘটনাস্থলে জরুরি উদ্ধারকারী দল, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস একযোগে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বুলডোজার ও হেভি মেশিনারির সাহায্যে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

রেড ক্রিসেন্ট এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও এই উদ্ধার কাজে সহায়তা করছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও নেমে পড়েছেন সহযোগিতায়।

মুখ্যমন্ত্রীর শোক ও নির্দেশনা

সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেন এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলেন।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা ভবিষ্যতে যেন এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি না দেখি, সে জন্য ভবন নিরাপত্তা ও মনিটরিং ব্যবস্থাকে কঠোরভাবে জোরদার করব।”

ভবন নির্মাণে অব্যবস্থাপনা: বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

করাচিতে ভবন ধসের ঘটনা নতুন নয়। বিগত এক দশকে এমন বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। শহরের আবাসন ব্যবস্থাপনায় নজরদারির অভাব, দুর্নীতি, এবং নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারই এসব ঘটনার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।

স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ‘আরবান হাউজিং অ্যান্ড প্ল্যানিং ফোরাম’-এর মতে, করাচিতে প্রায় ৪০ শতাংশ ভবনই অনুমোদনহীনভাবে তৈরি হয়েছে, যেগুলোর অনেকগুলোতেই কাঠামোগত দুর্বলতা বিদ্যমান। প্রতিটি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যথাযথ মান রক্ষা করা হচ্ছে না বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের।

ঐতিহাসিক লি মার্কেট: করাচির প্রাণ

লি মার্কেট করাচির অন্যতম পুরনো এবং জনবহুল এলাকা। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই বাজারটির নামকরণ করা হয়েছিল ব্রিটিশ প্রকৌশলী মীশাম লিয়ারের নামানুসারে। এটি শুধু একটি বাজারই নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক স্থাপনাও। আশপাশের ভবনগুলোও বেশ পুরনো এবং অনেকগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ।

ভবিষ্যতের পদক্ষেপ কী?

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়া শহরের অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ভাঙার বা মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষায় কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করার ওপরও জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা না দিলে ভবিষ্যতেও এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

সংবাদটির সারসংক্ষেপ:

  • দুর্ঘটনা: করাচির লি মার্কেট এলাকায় ৫-তলা ভবন ধস
  • মৃত্যু: এখন পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত
  • আহত: বহু মানুষ আহত ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
  • আটকে থাকা: ধ্বংসস্তূপে আরও মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা
  • কারণ: ভবনটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, বৃষ্টিপাতে কাঠামো দুর্বল হয়
  • মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া: শোক প্রকাশ ও তদন্তের নির্দেশ
  • ভবিষ্যতের পরিকল্পনা: ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ ও আইন প্রয়োগে কঠোরতা
মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button