গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজা, ১১ এপ্রিল ২০২৫ – ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজা উপত্যকায় আরও ১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে গাজা শহরে ১১ জন, অন্যান্য অঞ্চলে আরও ৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগের দিন, বুধবার, ইসরায়েলি হামলায় ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল, যা সংঘাতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইসরায়েলের ব্যাপক হামলার শিকার গাজার জনগণ ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে নির্বিচারে বোমা হামলার কবলে আছেন। ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রথম যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তবে শর্ত ভঙ্গ করে ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ১৮ মার্চ থেকে এই হামলায় মোট ১ হাজার ৫২৩ জন নিহত হয়েছেন, এবং আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩ হাজার ৮৩৪ জনে।
গাজায় সহিংসতা: এক দীর্ঘ রক্তাক্ত ইতিহাস
গাজায় ইসরায়েলের এ হামলা শুধু সাম্প্রতিক নয়, বরং দীর্ঘদিনের একটি চলমান সংঘাতের অংশ। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধাদের ইসরায়েলে হামলার পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। হামাসের হামলায় ইসরায়েল দাবি করে ১ হাজার ২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলি বাহিনীর পাল্টা হামলায় গাজা শহরের বেশিরভাগ বাড়িঘর এবং অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজার উপত্যকায় প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অনেকেই নার্স, শিশু এবং বৃদ্ধ। যুদ্ধের ভয়াবহতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেখানে মানুষের মৌলিক জীবনযাত্রার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।
বন্দিদের মুক্তি এবং গাজা সংকটের মানবিক দিক
অপরদিকে, গাজায় বন্দী থাকা আরও ৮০ ফিলিস্তিনি আজ মুক্তি পেয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসব বন্দিকে মুক্তি দেয় গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের কিসুফিম ক্রসিং থেকে, যা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব বন্দি গাজার বাসিন্দা, এবং তাদের মুক্তি দেওয়ার সময় কিছু শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, মুক্তি পাওয়া বন্দিদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর এবং তাদের দের আল-বালাহ শহরের আল-আকসা মার্টারস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, হাসপাতাল কর্মীরা জানান, এসব বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে পূর্ববর্তী কোনো তথ্য জানানো হয়নি। সাধারণত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকে, কিন্তু এবার এটি একেবারেই অস্বাভাবিক ছিল।
গাজার হাসপাতালে আবেগপূর্ণ দৃশ্য
হাসপাতালটিতে বন্দিদের মুক্তির পর সেখানে এক আবেগপূর্ণ দৃশ্য সৃষ্টি হয়। এক তরুণী, ফারাহ, দীর্ঘদিন পর তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে আসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ভাবছিলাম আমার বাবা মারা গেছেন, কিন্তু আজ তাকে বেঁচে পেয়ে আমি অত্যন্ত খুশি। দীর্ঘদিন তাকে ইসরায়েলের কুখ্যাত সাদি তেইমান কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছিল।” ফারাহর বাবা বন্দি ছিলেন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার পর থেকে।
গাজার যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব
গাজায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে চলে যাওয়ায়, মিসর এবং কাতার নতুন করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে, এ প্রস্তাব এখনো কার্যকর হয়নি। গাজার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল এবং হামাস উভয়ই।
ইসরায়েল-পালেস্টাইন সংঘাত: আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত
ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান সংঘাত শুধু স্থানীয় সমস্যা নয়, এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের মতো বিশ্ব শক্তিরা দুই পক্ষের মধ্যে শান্তির জন্য মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছে। তবে, কোনো স্থায়ী সমাধান এখনও দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে অধিকতর আলোচনা এবং কূটনৈতিক চাপ প্রয়োজন।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও সম্ভাবনা
ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের আশা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের পাশে দাঁড়াবে এবং সহিংসতা কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। তবে, বাস্তবতা হলো, গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আসন্ন দিনগুলিতে সংঘাতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে এবং এর ফলে মানবিক সংকট আরও প্রকট হতে পারে।
এই সহিংসতার অবসান এবং শান্তির প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বের নেতাদেরকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে গাজার জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পায় এবং তারা শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারে।