এবার আরও ৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলায় সেই সমন্বয়করা রিমান্ডে

রাজধানীর তেজগাঁও থানায় দায়ের হওয়া ৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলায় বহিষ্কৃত গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদসহ চারজনকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সংগঠনের সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব।
রিমান্ড শুনানির বিস্তারিত
এদিন চারজন আসামিকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তবে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক প্রত্যেকের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের পক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করে জানায়, অভিযুক্তদের হুমকি, চেক জালিয়াতি ও চাঁদা দাবি সংক্রান্ত কার্যকলাপ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন। অন্যদিকে আসামিপক্ষ জামিন আবেদন করে দাবি করে যে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। কিন্তু আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন আংশিক মঞ্জুর করে চারদিনের রিমান্ডের নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নিট জোন প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক আবুল কালাম আজাদের কাছে আসামিরা গত ২৬ জুন ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। তারা নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে পরিচিত করে ভুক্তভোগীর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে হুমকি দেয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া এবং ভাড়া করা সন্ত্রাসী দিয়ে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকিও দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে আসামিরা জোরপূর্বক জনতা ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টের চেকবইয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় এবং দ্রুত টাকা জমা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ১ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন।
এর আগে গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগ
এমন অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে গত ২৬ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে একই গোষ্ঠী। ওই ঘটনায়ও আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দেন রিয়াদ।
এই দুই ঘটনার পরপরই ছাত্র সংগঠনটির নাম নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। ধারাবাহিকভাবে চাঁদাবাজির অভিযোগে একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় সংগঠনের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ছাত্র রাজনীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে চাঁদাবাজি ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে আসছে। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে কোনো কোনো সংগঠনের সদস্যরা ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক এই দুটি ঘটনা সেই চক্রের সক্রিয়তার স্পষ্ট প্রমাণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্র রাজনীতিকে শিক্ষাঙ্গন ও সমাজের উন্নয়নে কাজে লাগানোর পরিবর্তে এ ধরনের কর্মকাণ্ড পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তারা মনে করছেন, দোষীদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে, তবে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ কমে আসবে।
ব্যবসায়ী সমাজে উদ্বেগ
মামলার বাদী আবুল কালাম আজাদসহ অনেক ব্যবসায়ী মনে করছেন, চাঁদাবাজির কারণে ব্যবসার পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। তিনি আদালতে অভিযোগ করেছেন, আসামিরা বারবার ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের কিছু সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সম্প্রতি ব্যবসায়ী মহলে চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়ে গেছে। তারা মনে করছেন, যদি এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান
পুলিশ বলছে, তদন্তে তারা পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। অভিযুক্তদের কাছ থেকে জবানবন্দি নেওয়া হলে পুরো ঘটনার পেছনে আরও কারা জড়িত, তা উদঘাটন করা সম্ভব হবে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, সংগঠিত চক্রটি ছাত্র রাজনীতির ব্যানারে থেকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছিল। এ কারণে রিমান্ডের সময় আসামিদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছে পুলিশ।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কী হতে পারে
এ মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তবে আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে এ ধরনের মামলায় প্রমাণ সংগ্রহ এবং সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। তাই মামলাটি কীভাবে এগোয়, তা এখন সবার দৃষ্টি কাড়ছে।
সমাপ্তি মন্তব্য
রাজধানীতে একের পর এক চাঁদাবাজির ঘটনায় সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ী সমাজে উদ্বেগ বাড়ছে। অভিযুক্তরা ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় বিষয়টি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত এবং স্বচ্ছ হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কমে আসবে। তবে বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—এই ঘটনার পেছনে কি আরও বড় কোনো চক্র সক্রিয় আছে, নাকি কেবলমাত্র কয়েকজন ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতা? এর উত্তর মিলবে তদন্ত ও বিচার শেষে।
এম আর এম – ১০৬৩, Signalbd.com