নতুন সংস্কারে এনবিআরের আন্দোলন, আজ বৈঠক হবে না

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও সংস্কার দাবির মধ্যে আজ অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্ট করে ঘোষণা করেছেন, আজ তাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক হবে না। তিনি বলেন, “যদি কর্মকর্তারা শাটডাউন কর্মসূচি পালন করতে চান, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।”
এনবিআরের আন্দোলন ও সরকারের অবস্থান
দেশের রাজস্ব সংগ্রহের প্রধান প্রতিষ্ঠান এনবিআর-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব খাতে ব্যাপক সংস্কারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট ক্যাডারের ২০ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল সরকারের কাছে তাদের দাবি উপস্থাপন করছিল। গত কয়েক দিন ধরে তারা পুরোপুরি কর্মবিরতি পালন করছেন, যা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলছে।
কিন্তু আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, এনবিআরের কর্মসূচি এবং আন্দোলনের বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আজ কোনও বৈঠক হবে না। আগামী ১ জুলাই বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে।
আন্দোলনের পেছনের কারণ ও দাবিসমূহ
আন্দোলনকারীদের দাবি মূলত এনবিআরের বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দূর করে রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ করা। তারা আরও চান কর ব্যবস্থায় সুস্পষ্ট ও সমন্বিত সংস্কার, আধুনিকায়ন এবং কর্মকর্তাদের কাজের পরিবেশ উন্নত করা।
বিশেষ করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কর সংগ্রহ প্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুততর করতে চান তাঁরা। এছাড়া, কর্মচারীদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিও আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ দাবির মধ্যে একটি।
সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও আগামী পরিকল্পনা
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা সবসময় এনবিআরের কর্মীদের ভালো চাই এবং তাদের দাবি বিবেচনায় নিচ্ছি। তবে চলমান শাটডাউন কর্মসূচি দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের পক্ষ থেকে সবদিক বিবেচনা করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ১ জুলাই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে।”
সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, রাজস্ব ব্যবস্থায় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে কিন্তু সেটা হবে সুসমন্বিত ও সব পক্ষের মতামত গ্রহণ করে।
শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাব ও নাগরিক জীবনে অসুবিধা
এনবিআরের আন্দোলনের কারণে দেশের করসংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকদের কর পরিশোধ ও আর্থিক লেনদেনে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাংক, কর অফিস এবং কাস্টমস হাউসে কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলমান শাটডাউন দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে রপ্তানি-আমদানি খাতে ব্যাঘাত দেখা দিতে পারে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ভূমিকা
এই আন্দোলনের পেছনে রয়েছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ নামে একটি শক্তিশালী সংগঠন, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার। ঐক্য পরিষদ এনবিআরের বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মীদের একত্রিত করে কর্মসূচি পরিচালনা করছে।
তারেক রিকাবদার জানিয়েছেন, “আমাদের দাবি দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ এবং আধুনিকায়িত করার। আমরা আপোষহীন এবং আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না সরকারের কাছ থেকে সন্তোষজনক সমাধান আসে।”
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এনবিআরের সংস্কার
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উন্নত ও স্বচ্ছ কর ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। বাংলাদেশেও এনবিআর-এর আধুনিকায়ন গুরুত্বপূর্ণ। কর সংগ্রহের প্রক্রিয়া যত দ্রুত ও স্বচ্ছ হবে, তত বেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ উন্নত হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এনবিআরের কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন যদি সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছায় তবে তা দেশের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হবে।
এনবিআরের কর্মচারীদের আন্দোলন এবং সরকারের অবস্থান দেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। যদিও আজকের বৈঠক বাতিল হয়েছে, আগামী ১ জুলাইয়ের বৈঠকটি কিভাবে এগোবে তা অপেক্ষার বিষয়। সেখান থেকেই জানা যাবে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় কতোটা সফল সংস্কার আসতে যাচ্ছে।
এই আন্দোলন ও সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সিঙ্গনাল বিডি সবসময় আপনাদের জন্য তথ্য সরবরাহ করবে।
কীভাবে এনবিআরের আন্দোলন দেশের কর ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারে?
কেন এনবিআর কর্মচারীরা শাটডাউন করছেন?
সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা ও কর্মচারীদের দাবি