বিশ্ব

ইজরায়েল-ভারত মিলিত উদ্যোগে বানানো বাঙ্কার বাস্টারের খোল

কলকাতার ইছাপুরের মেটাল অ্যান্ড স্টিল ফ্যাক্টরির ‘বাঙ্কার বাস্টার’ খোলের সাফল্য

কলকাতার উপকণ্ঠে অবস্থিত ইছাপুরের মেটাল অ্যান্ড স্টিল ফ্যাক্টরি (MSF) এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোড়ন সৃষ্টি করল। সম্প্রতি ইজরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের মিসাইলের জন্য এই কারখানায় তৈরি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ খোল পছন্দ করেছে। এটি যুদ্ধজুড়ে এক অত্যন্ত শক্তিশালী এবং উন্নতমানের মিসাইল খোল, যা ভূ-গর্ভস্থ শত্রু বাঙ্কার ভেদ করতে সক্ষম।

মৌলিকভাবে, ‘বাঙ্কার বাস্টার’ হলো এমন একটি বিস্ফোরক খোল, যা শক্তিশালী ভূ-গর্ভস্থ বাঙ্কার বা সুরক্ষিত শত্রু ঘাঁটি ভেদ করতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণ মিসাইলের থেকে এর পারফরম্যান্স অনেকগুণ উন্নত, যা সামরিক যুদ্ধক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।

ইজরায়েলি সেনা প্রতিনিধিদের কলকাতায় সফর ও প্রাথমিক অর্ডার

কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ইজরায়েল থেকে সম্প্রতি ইভা করনেন্যু এবং আসফ ফিশারম্যান নামে দুই উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা ইছাপুরের মেটাল অ্যান্ড স্টিল ফ্যাক্টরিতে পরিদর্শনে এসেছেন। তারা এখানে আগে থেকেই দেওয়া ১০০ কিলোগ্রামের মিসাইল খোলের ৩০টি অর্ডার পরখ ও যাচাই করতে এসেছিলেন।

তাদের সফরকালে কেবল তৈরি খোল নয়, সেই খোল তৈরি প্রক্রিয়াও তারা ঘুরে দেখেছেন এবং প্রাথমিকভাবে এই প্রযুক্তি ও মানে তারা সন্তুষ্ট। দিল্লির একটি গোপন সূত্র জানায়, ইছাপুরে তৈরি খোল যদি ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর চাহিদা মেটায়, তাহলে তা ফিনিশিংয়ের জন্য মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে পাঠানো হবে। পরিশেষে সেই ফিনিশড খোল সরাসরি ইজরায়েলে রফতানি করা হবে।

তবে কতখানি পরিমাণে এই খোল ইজরায়েল অর্ডার দিয়েছে তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

গত বছরের ঐতিহাসিক সফর ও খোঁজখবরের সূত্রপাত

ঘটনার সূচনা হয় ২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, যখন ইজরায়েলি সেনা অফিসার জোহর ল্যাচম্যান ও ইয়োরাম মুসাফি কলকাতায় এসে বিশেষ ধরনের ‘বাঙ্কার বাস্টার’ খোলের খোঁজে এমএসএফ-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল এমন একটি শক্তিশালী খোল পাওয়া যা ভূ-গর্ভস্থ শত্রু ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম।

ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্রে জানা যায়, ইজরায়েলি সেনাবাহিনী পৃথিবীর নানা প্রান্তে এমন শক্তিশালী খোলের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছিল। সেই প্রক্রিয়ায় তাদের নজর পড়ল ইছাপুরের মেটাল অ্যান্ড স্টিল ফ্যাক্টরির উপর। পরে তারা সরাসরি যোগাযোগ করে এবং এমএসএফ-র কাছে তাদের চাহিদা তুলে ধরেন। ইছাপুরে সেই খোল তৈরির পর সফল পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও কলকাতার প্রযুক্তির সম্ভাবনা

শুধু ইছাপুর নয়, কলকাতার একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও আধুনিক প্রযুক্তিতে শক্তিশালী বাঙ্কার বাস্টার তৈরির যন্ত্র নিয়ে কাজ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দেশের সামরিক প্রযুক্তিতে কলকাতার অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছে।

বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান সংঘাতপূর্ণ পরিবেশে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ অব্যাহত থাকবে। অনেক দেশ এখন নিজেদের সুরক্ষায় ভূ-গর্ভস্থ বাঙ্কার তৈরি করছে, যেখানে পরমাণু অস্ত্র সুরক্ষিত রাখা হচ্ছে। এই বাঙ্কারগুলো ভেদ করার জন্য উন্নতমানের বাঙ্কার বাস্টার প্রয়োজনীয়।

ইছাপুরের এমএসএফ—ঐতিহ্য ও দক্ষতা

১৮৭২ সাল থেকে এমএসএফ দক্ষতার সঙ্গে গোলাবারুদ, কামান, এবং বন্দুকের খোল বানিয়ে আসছে। এটি কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির অংশ ছিল, ১৯২০ সালে সরাসরি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির অধীনে চলে আসে। এখন বিশ্বমানের সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতে এটির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।

ইজরায়েল-ভারত সামরিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

ভারত ও ইজরায়েলের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ক্রমেই গভীর হচ্ছে। বিশেষ করে উন্নত প্রযুক্তি ও অস্ত্র নির্মাণে দুই দেশের সংযোগ শক্তিশালী হচ্ছে। ইছাপুরের এই ‘বাঙ্কার বাস্টার’ খোলের সফলতা ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে প্রশংসিত হওয়া সেই উন্নয়নেরই এক বড় প্রমাণ।

পরবর্তী পদক্ষেপ

সূত্র জানায়, ইছাপুর থেকে তৈরি খোলগুলো জব্বলপুরে ফিনিশিংয়ের জন্য পাঠানো শুরু হলে, ভারতের সামরিক প্রস্তুতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে। এরপর থেকে এই খোল সরাসরি ইজরায়েলে রফতানি করা হবে, যা দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে।

সারমর্ম

  • কলকাতার ইছাপুরের মেটাল অ্যান্ড স্টিল ফ্যাক্টরিতে তৈরি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ খোল ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর পছন্দে জায়গা করে নিয়েছে।
  • ইজরায়েলি সেনা কর্মকর্তারা সরাসরি এসে খোল পরখ করেছেন এবং প্রস্তুতি প্রক্রিয়া দেখেছেন।
  • ফিনিশিংয়ের কাজ হবে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে, এরপর খোল রফতানি হবে ইজরায়েলে।
  • ইজরায়েল-ভারত সামরিক সহযোগিতায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।
  • কলকাতার অন্য প্রতিষ্ঠানও উন্নত বাঙ্কার বাস্টার তৈরিতে কাজ করছে।
  • পশ্চিম এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং আধুনিক যুদ্ধনীতির প্রেক্ষিতে এই ধরনের প্রযুক্তির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব ও প্রযুক্তির অগ্রগতি নতুন যুগের সূচনা করেছে। ইছাপুর থেকে শুরু হয়ে জব্বলপুর ও ইজরায়েলের সহযোগিতায় তৈরি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ মিসাইল খোল বিশ্বমঞ্চে ভারতের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার এক উজ্জ্বল প্রদর্শনী।

MAH – 12280 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button