বিশ্ব

নেতজারিম করিডর ছেড়ে গেল ইসরায়েলি বাহিনী, গাজায় স্বস্তির নি:শ্বাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলি সেনারা নেতজারিম করিডর থেকে সরে গেছে। এই করিডরটি গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশকে বিভক্ত করার জন্য ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী তৈরি করেছিল।

ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন

গতকাল রোববার সকালে ইসরায়েলি বাহিনী ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এবং দুই কিলোমিটার প্রশস্ত এই করিডর ছেড়ে দেয়। ২০২৪ সালের হামলার সময় ইসরায়েলি বাহিনী এই করিডর ব্যবহার করে গাজার মধ্যে সামরিক কৌশলগত অবস্থান নিয়েছিল। তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মেনে এবার সেই অবস্থান ছেড়ে দিল তারা।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তির পঞ্চম ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পরই এই সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইসরায়েলি সেনারা এখন গাজা ও ইসরায়েল সীমান্তের বাফার জোনে অবস্থান করছে।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত নেতজারিম করিডর

সেনা প্রত্যাহারের পর ড্রোন ও স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা ছবিতে দেখা গেছে, নেতজারিম করিডর এলাকায় ধ্বংসস্তূপ ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। বাড়িঘর, অবকাঠামো এমনকি কৃষিজমিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই করিডর দিয়ে গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে অবাধ চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর গাজায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহে সুবিধা হবে।

হামাসের প্রতিক্রিয়া

নেতজারিম করিডর থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি যুদ্ধের আরেকটি লক্ষ্য অর্জনে ইসরায়েলের ব্যর্থতার প্রমাণ। হামাসের মুখপাত্র বলেন, “ইসরায়েল আমাদের ভূখণ্ডে সামরিক দখলদারিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা সফল হয়নি।”

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অভিযান তীব্রতর

যদিও গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রভাব পড়েছে, তবে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ইসরায়েলি বাহিনী নুর শামস শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালায়, যেখানে চারজন ফিলিস্তিনি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীও রয়েছেন, যাঁর গর্ভস্থ শিশুটিও প্রাণ হারায়।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জানান, “আমরা পশ্চিম তীরে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।” তবে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ঘটনাকে “নির্বিচার হত্যাকাণ্ড” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি ফিলিস্তিনিদের সৌদি আরবে পুনর্বাসনের বিষয়ে মন্তব্য করেন, যা সৌদি আরবসহ আরব দেশগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ফিলিস্তিনের জনগণ তাদের নিজ ভূখণ্ডেই স্বাধীনতার অধিকার রাখে।”

এর আগে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, কাতার ও কুয়েতও নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সমালোচনা করেছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি মিসরের উদ্যোগে আরব দেশগুলোর জরুরি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে আলোচনা হবে।

পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে?

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রম এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিম তীরে সংঘাত বৃদ্ধি পেলে গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি টেকসই হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও হামাসের প্রতিক্রিয়া আগামী দিনে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যায়, তা দেখার বিষয়। তবে আপাতত গাজার জনগণের জন্য সেনা প্রত্যাহার কিছুটা স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button