বিশ্ব

পাকিস্তান, ভারতের কাশ্মীর ও নেপালে ভয়াবহ বন্যা, নিহত চার শতাধিক

প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় পাকিস্তান, ভারতের কাশ্মীর ও নেপালের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ৪০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন এবং পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্যায় পুরো গ্রাম ভেসে গেছে, শত শত বাড়িঘর ধসে পড়েছে এবং রাস্তা-ঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও অতিবৃষ্টি এই বিপর্যয়কে আরও তীব্র করে তুলেছে।

পাকিস্তানে ৩২১ জনের মৃত্যু, ভেসে গেছে একের পর এক গ্রাম

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বুনের জেলায় সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার প্রবল বর্ষণে এখানে ৩২১ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। স্থানীয় উদ্ধার সংস্থা জানিয়েছে, দশটিরও বেশি গ্রাম পানির তোড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

ভূমিধস ও রাস্তা ধসে পড়ার কারণে দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছাতে পারছে না উদ্ধার দল। বুনের জেলার এক কর্মকর্তা জানান, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেক মানুষ চাপা পড়ে থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১২০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

পাকিস্তানের ত্রাণ তৎপরতায় যুক্ত একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পড়ে পাঁচজন ক্রু নিহত হয়েছেন। এতে উদ্ধার প্রচেষ্টা আরও জটিল হয়ে পড়েছে।

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে তীর্থস্থান চাশোটিতে ভয়াবহ বিপর্যয়

ভারত-শাসিত কাশ্মীরের চাশোটি শহরে প্রবল বর্ষণের পর আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও ২০০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন। চাশোটি শহরটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি জনপ্রিয় তীর্থস্থান। বন্যায় বহু তীর্থযাত্রী এবং স্থানীয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অল্প সময়ের মধ্যে পাহাড়ি ঢাল থেকে নেমে আসা কাদামাটি ও পাথরের ঢল পুরো বসতি ভাসিয়ে নিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা এটিকে “ভূমিকম্পের মতো ভয়ঙ্কর দৃশ্য” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

নেপালে বন্যা ও ভূমিধসে নিহত ৪১, আহত ১২১

নেপালের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টানা বর্ষণ ও ভূমিধসে দেশটির পাহাড়ি অঞ্চলে অন্তত ৪১ জন নিহত এবং ১২১ জন আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অসংখ্য বাড়িঘর ধসে পড়েছে এবং সড়কপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না।

নেপালের সেনা ও পুলিশ সদস্যরা জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে কঠিন ভৌগোলিক অবস্থার কারণে অনেক জায়গায় এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের চোখে ভয়াবহ মুহূর্ত

বন্যাকবলিত পাকিস্তানের সালারজাই এলাকার এক শিক্ষার্থী ফারহাদ আলী জানান, “বৃষ্টি যখন বাড়ছিল, মনে হচ্ছিল মাটি কেঁপে উঠছে। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের ঘরবাড়ি ধসে পড়ল, চারদিকে শুধু পাথর আর কাদার স্রোত।”

কাশ্মীরের এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “আমার চোখের সামনে কাদার নিচ থেকে একসাথে আটটি মরদেহ টেনে বের করা হয়। এমন ধ্বংসযজ্ঞ কল্পনাতেও আসেনি।”

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে সতর্কতা

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবারের ভারী বর্ষণ মূলত একটি ক্লাউডবার্স্টের কারণে হয়েছে, যেখানে এক ঘণ্টার মধ্যে ১০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি ঝরে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, হিমালয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মৌসুমি বন্যা ও ভূমিধসের তীব্রতা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি হচ্ছে।

এছাড়া পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনে আরও প্রবল বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে হঠাৎ বন্যা ও নগর বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে।

মানবিক সংকট ও ভবিষ্যতের আশঙ্কা

বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন এবং অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিচ্ছেন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, যদি দ্রুত ত্রাণ না পৌঁছানো যায় তবে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলছেন—জলবায়ু পরিবর্তন ও অব্যবস্থাপনার কারণে হিমালয় অঞ্চলের এমন দুর্যোগ আগামী বছরগুলোতে কি আরও ঘন ঘন দেখা দেবে?

সংক্ষিপ্তসার

পাকিস্তান, ভারত-শাসিত কাশ্মীর ও নেপালের এই ভয়াবহ বন্যা দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু সংকটের এক কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছে। প্রাণহানি, ধ্বংসস্তূপ ও মানবিক বিপর্যয়ের এই চিত্রে পুরো অঞ্চল শোকাহত। তবে মূল প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—জলবায়ু পরিবর্তনের এই ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত আমরা?

এম আর এম – ০৯০৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button