গুলশানে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ৫

রাজধানীর গুলশানে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে পাঁচজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাসায় গিয়ে টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
প্রধান নগরী ঢাকায় আবারও সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের তৎপরতা সামনে এলো। রাজধানীর গুলশান এলাকার একটি বাসায় গিয়ে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদা দাবি করতে গিয়ে পাঁচজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, এদের নেতৃত্বে ছিলেন রিয়াদ নামে এক তরুণ, যিনি আগেও একই ধরনের কাজে জড়িত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ঘটনাটি কীভাবে ঘটল
পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যার কিছু সময় আগে গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে অবস্থিত সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাসায় কয়েকজন যুবক প্রবেশ করে নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয়ে পরিচিতি দেয়। পরে তারা ওই পরিবারের কাছে চাঁদা দাবি করে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতেনাতে তাদের আটক করে।
ওই সময় মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে কিছু নথিপত্র ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তারা গুলশান থানায় হেফাজতে রয়েছেন।
চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন রিয়াদ
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী রিয়াদ নামে এক তরুণ। পুলিশ জানায়, গত ১৭ জুলাইও এই চক্রটি একই বাড়িতে গিয়েছিল এবং সেসময় তারা ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তখন চাপের মুখে বাড়ির লোকজন তাদের ১০ লাখ টাকা দেয়। এর পর তারা আবার শনিবার সন্ধ্যায় বাকি টাকা নিতে এলে পুলিশ তাদের ধরতে সক্ষম হয়।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, রিয়াদ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছিল। তবে এবার তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে
গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ধারণা, এদের পেছনে আরও বড় কোনো চক্র থাকতে পারে। রিয়াদ ছাড়াও গ্রেপ্তার হওয়া অপর চারজনের পরিচয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে যে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায় করার চেষ্টা করছিল। চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় সক্রিয় ছিল।
আগের ঘটনার প্রেক্ষাপট
রাজধানীতে চাঁদাবাজির ঘটনা নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি বা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে থাকে কিছু অসাধু ব্যক্তি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিকবার এ ধরনের চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। সম্প্রতি গুলশান, বনানী ও ধানমন্ডি এলাকায় ভুয়া পরিচয়ে চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়ে গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, নগরীতে বসবাসকারী ধনী পরিবারের উপর এই ধরনের চক্রের নজর বেশি থাকে। তারা পরিচিতি ও প্রভাব খাটিয়ে ভুক্তভোগীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে।
পুলিশের কঠোর অবস্থান
পুলিশ বলছে, যারা ভুয়া পরিচয়ে চাঁদাবাজির চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি অবলম্বন করা হবে। গুলশান থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা কাউকে ছাড় দেব না। যারা এই ধরনের অপরাধে জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর গুলশানের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তারা বলছেন, যদি পুলিশ এভাবে দ্রুত পদক্ষেপ না নিত, তাহলে এসব চক্র আরও সাহসী হয়ে উঠত। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, “আমরা অনেক দিন ধরে লক্ষ্য করছি এই ধরনের অপরাধ বাড়ছে। পুলিশের এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে আমাদের নিরাপত্তা বোধ বাড়বে।”
সামনে কী হতে পারে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন তদন্ত করছে এই চক্রের পেছনে আরও কারা জড়িত আছে। আগামী দিনে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় এ ধরনের চাঁদাবাজি রোধে বিশেষ নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে পুলিশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরাধীরা নতুন কৌশলে প্রতারণা করছে বলে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। সন্দেহজনক কোনো দাবি এলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে হবে।
শেষ কথা
গুলশানে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির এই ঘটনাটি রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরে চলা এক অচেনা সমস্যার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপে চক্রটি ধরা পড়লেও, এই প্রবণতা রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ ও জনসচেতনতা দুটোই প্রয়োজন।
এম আর এম – ০৫৩৬, Signalbd.com